নদীর বিদ্রোহ (গল্প) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় – মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Nodir Bidroho Question and Answer
নদীর বিদ্রোহ (গল্প) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় – মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Nodir Bidroho Question and Answer : এই দশম শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর – WBBSE Class 10 Bengali Nodir Bidroho Question and Answer, Suggestion, Notes নদীর বিদ্রোহ (গল্প) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সাজেশন: নদীর বিদ্রোহ (গল্প) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে বহুবিকল্পভিত্তিক, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রোচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) গুলি আগামী পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট।
আপনারা যারা আগামী মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য বা মাধ্যমিক বাংলা – নদীর বিদ্রোহ (গল্প) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর খুঁজে চলেছেন, তারা নিচে দেওয়া প্রশ্ন ও উত্তর ভালো করে পড়তে পারেন।

শ্রেণী | দশম শ্রেণী (মাধ্যমিক) |
বিষয় | মাধ্যমিক বাংলা |
গল্প | নদীর বিদ্রোহ (Nodir Bidroho) |
লেখক | মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় |
[Post সম্পর্কে কোন পরামর্শ বা অনুরোধ বা অন্য কোন বক্তব্য থাকলে নীচে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারো না হলে সরাসরি আমাকে মেসেজ করতে পারো]
আমাদের এই পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই পোস্টটি থেকে যদি আপনি লাভবান হন তাহলে আমাদের পরিশ্রম সফল হবে। যেকোন প্রশ্নের উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইটি ফলো করুন এবং নিজেকে তথ্যসমৃদ্ধ করে তুলুন, ধন্যবাদ।
নদীর বিদ্রোহ (গল্প) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় – মাধ্যমিক দশম শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | West Bengal Madhyamik Class 10th Bengali Nodir Bidroho Question and Answer
MCQ | নদীর বিদ্রোহ (গল্প) মানিক বন্দোপধ্যায় – মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Nodir Bidroho Question and Answer :
1. বউকে নদেরচাঁদ যে – চিঠি লিখেছিল , তার পৃষ্ঠাসংখ্যা - (A) পাঁচ (B) তিন (C) এক (D) দুই
Answer: (A) পাঁচ
2. নদেরচাঁদ বসিয়া বসিয়া ভিজিতে লাগিল , উঠিল না । কারণ— (A) সে বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোবাসত(B) তার উঠতে ইচ্ছে করছিল না (C) এটা তার ছেলেমানুষি (D) সে নদীর শব্দ শুনছিল
Answer: (D) সে নদীর শব্দ শুনছিল
3. নদেরচাদ স্টেশনমাস্টারের চাকরি করছে -(A) চার বছর(B) দু – বছর(C) পাঁচ বছর(D) এক বছর
Answer: (A) চার বছর
4. নদেরচাদের চার বছরের চেনা নদীর মূর্তিকে আরও বেশি ভয়ংকর ও অপরিচিত মনে হওয়ার কারণ -(A) সে বহুদিন হল নদীর ধারে আসেনি(B) সে একটি সংকীর্ণ ক্ষীণস্রোতা নদীর কথা ভাবছিল(C) প্রবল বৃষ্টিতে নদীর এই চেহারা হয়েছে (D) নদীতে বাঁধ দেওয়া হয়েছে
Answer: (B) সে একটি সংকীর্ণ ক্ষীণস্রোতা নদীর কথা ভাবছিল
5. নদেরচাদের বউকে লেখা চিঠির বিষয়বস্তু ছিল— (A) বিরহবেদনা (B) আনন্দোচ্ছ্বাস (C) শোকবার্তা (D) সাংসারিক পরামর্শ
Answer: (A) বিরহবেদনা
6. ঘণ্টা বিশ্রাম করিয়া মেঘের যেন নূতন শক্তি সঞ্চিত হইয়াছে ‘ । (A) পাঁচেক (B) তিনেক (C) দুয়েক (D) খানেক
Answer: (B) তিনেক
7. রপর নামিল বৃষ্টি ।’— বৃষ্টি পড়েছিল - (A) টিপটিপ করে(B) অঝোরে (C) মুশলধারায় (D) ঝমঝম করে
Answer: (C) মুশলধারায়
8. ব্রিজের ধারকস্তম্ভের উপাদানগুলি হল - (A) পাথর ও বালি (B) ইট , সুরকি ও সিমেন্ট(C) মাটি ও পাথর(D) ইট , পাথর ও মাটি
Answer: (B) ইট , সুরকি ও সিমেন্ট
9. নদেরচাদ রোজ নদীকে দেখে -(A) নদীর পাড়ে বসে (B) স্টেশানে বসে(C) বাঁধের ওপর বসে(D) ব্রিজের ধারকস্তম্ভের শেষপ্রান্তে বসে
Answer: (D) ব্রিজের ধারকস্তম্ভের শেষপ্রান্তে বসে
10. নদীর স্রোত ফেনিল আবর্ত রচনা করে -(A) ধারকস্তম্ভে বাধা পাওয়ায়(B) জল বেড়ে যাওয়ায়(C) বাঁধ নির্মাণ করায়(D) মুশলধারায় বৃষ্টির কারণে
Answer: (A) ধারকস্তম্ভে বাধা পাওয়ায়
11. এত উঁচুতে জল উঠে এসেছে যে , মনে হয় ইচ্ছা করলেই বুঝি— (A) ঝাঁপ দেওয়া যায় (B) হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করা যায়(C) স্নান করা যায়(D) পান করা যায়
Answer: (B) হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করা যায়
12. বউকে পাঁচ পাতার চিঠি লিখতে নদেরচাদের সময় লেগেছিল - (A) পাঁচ দিন(B) সাত দিন (C) এক দিন(D) দু – দিন
Answer: (D) দু – দিন
13. ‘ নদেরচাঁদের মন হইতে ছেলেমানুষি আমোদ মিলাইয়া গেল ।’— কারণ -
(A) বৃষ্টিতে চারদিক আবছা হয়ে গেল (B) তার মনে ভয় উপস্থিত হল (C) তার ফিরতে দেরি হয়ে যাচ্ছিল (D) তার বউয়ের জন্য মনখারাপ করছিল
Answer: (B) তার মনে ভয় উপস্থিত হল
14. ‘ এই ভীষণ – মধুর শব্দ ‘ বলতে এককথায় যা বোঝানো যেতে পারে , তা হল -
(A) ভয়ংকর – সুন্দর (B) হিংস্ৰ – বিষাক্ত (C) অবশ – অবসন্ন (D) ব্যথা – বেদনাময়
Answer: (A) ভয়ংকর – সুন্দর
15. নদীর বিদ্রোহের কারণ ছিল— (A) অতিরিক্ত বর্ষণ (B) অনাবৃষ্টি (C) বন্দিদশা থেকে মুক্তি (D) ক্ষীণস্রোত
Answer: (C) বন্দিদশা থেকে মুক্তি
16. ‘ পারিলেও মানুষ মানুষ কি তাকে তাকে রেহাই দিবে ? – যার কথা বলা হয়েছে , তা হল -
(A) বাঁধ (B) নদী(C) ব্রিজ(D) নদেরচাঁদ
Answer: (B) নদী
17. নদেরটাদের ভারি আমোদ বোধ হইতে লাগিল । কারণ— (A) বৃষ্টিতে ভিজে(B) বউকে চিঠি লিখে(C) নদীর স্ফীতরূপ দেখে(D) মাঠঘাট ডুবে যেতে দেখে
Answer: (C) নদীর স্ফীতরূপ দেখে
18. নদেরচাঁদ পকেট থেকে যা বের করে স্রোতের মধ্যে ছুড়ে দিল , তা হল - (A) পুরোনো চিঠি (B) ঢাকা (C) পয়সা(D) কাগজের টুকরো
Answer: (A) পুরোনো চিঠি
19. ‘ জলপ্রবাহকে আজ তাহার জীবন্ত মনে হইতেছিল , -
(A) প্রবল বর্ষণের জন্য(B) ভয়ংকরতার জন্য(C) বিরহবেদনার জন্য(D) উন্মত্ততার জন্য
Answer: (D) উন্মত্ততার জন্য
20. নদেরচাঁদ গর্ব অনুভব করত— (A) নতুন রং করা ব্রিজটির জন্য (B) নদীটির জন্য(C) রেলের বাঁধটির জন্য(D) স্টেশনটির জন্য
Answer: (A) নতুন রং করা ব্রিজটির জন্য
21. নদেরচাঁদ কল্পনা করার চেষ্টা করতে লাগল - (A) আকাশ – ভাঙা বৃষ্টি(B) নদীর বর্ষণ – পুষ্ট মূর্তি(C) পঙ্কিল জলস্রোত(D) মেঘাচ্ছন্ন আকাশ
Answer: (B) নদীর বর্ষণ – পুষ্ট মূর্তি
22. নদেরচাঁদ ছিল একজন - (A) ট্রেনের চালক (B) লাইটম্যান (C) স্টেশনমাস্টার(D) মাস্টারমশাই
Answer: (C) স্টেশনমাস্টার
23. নদেরচাদের বয়স হল - (A) বাইশ বছর(B) আটাশ বছর (C) ত্রিশ বছর(D) চল্লিশ বছর
Answer: (C) ত্রিশ বছর
24. নদীর জন্য নদেরচাদের মায়াকে অস্বাভাবিক বলার কারণ হল -
(A) প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই স্বভাব প্রায় দেখা যায় না (B) নদী প্রকৃতির একটি সাধারণ অঙ্গ(C) নদীর প্রতি এত মায়া পাগলামির লক্ষণ(D) উপরের সবকটিই
Answer: (A) প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই স্বভাব প্রায় দেখা যায় না
25. নদীর প্রতি নিজের পাগলামিতে নদেরচাদের— (A) ভয় হয় (B) দুঃখ হয় (C) আনন্দ হয় (D) গর্ব হয়
Answer: (C) আনন্দ হয়
26. নদেরচাদের উন্মত্ত নদীর কয়েক হাত উঁচুতে বসে থাকা উচিত হয়নি মনে হল , কারণ -
(A) বজ্রপাতে সে মারা যেতে পারত (B) ব্রিজ ভেঙে পড়তে পারত (C) সে পড়ে যেতে পারত (D) সে নদীর প্রতিহিংসার শিকার হতে পারত
Answer: (D) সে নদীর প্রতিহিংসার শিকার হতে পারত
27. নদীকে ভালোবাসার কৈফিয়ত হিসেবে নদেরচাঁদ যে কারণ দেখায় , সেটি হল—
(A) সে কোনোদিন নদী দেখেনি (B) নদীটি খুব সুন্দর (C) নদী থেকে সে মাছ ধরে(D) নদীর ধারে তার জন্ম
Answer: (D) নদীর ধারে তার জন্ম
28. শৈশবে , কৈশোরে ও প্রথম যৌবনে মানুষ -
(A) ভালোমন্দের হিসেব করে না (B) বড়ো – ছোটোর হিসেব করে না (C) সাদা – কালোর হিসেব করে না(D) ন্যায় – অন্যায়ের হিসেব করে না
Answer: (B) বড়ো – ছোটোর হিসেব করে না
29. দেশের ক্ষীণস্রোতা নির্জীব নদীটিকে নদেরচাঁদ যার মতো মমতা করত -
(A) গর্ভধারিণী মায়ের মতো(B) চিরদুঃখী বোনের মতো (C) অসুস্থ দুর্বল আত্মীয়ার মতো(D) দারিদ্র্যাজর্জরিত বন্ধুর মতো
Answer: (C) অসুস্থ দুর্বল আত্মীয়ার মতো
30. যে – বছরে নদীর ক্ষীণ স্রোতধারা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল , সেই বছরটি ছিল -
(A) অতিবৃষ্টির বছর(B) অনাবৃষ্টির বছর(C) দুর্ভিক্ষের বছর(D) বন্যার বছর
Answer: (B) অনাবৃষ্টির বছর
31. দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগতে ভুগতে পরমারীয়া মরে যাওয়ার উপক্রম করলে মানুষ কাঁদে -
(A) তাকে বাঁচাতে না পারার অসহায়তায়(B) চিকিৎসা ভালোভাবে না – হওয়ার জন্য(C) ঈশ্বরের কাছে তার জীবন প্রার্থনা করে(D) তার চিকিৎসায় প্রচুর অর্থব্যয় হওয়ার জন্য
Answer: (A) তাকে বাঁচাতে না পারার অসহায়তায়
32. নদেরচাদের সঙ্গে নদীর যে সম্পর্ক ছিল , তাকে বলা হয় - (A) প্রেম (B) সখ্য (C) শত্রুতা(D) প্রতিদ্বন্দ্বিতা
Answer: (B) সখ্য
33. নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হয়ে গেল , কারণ -
(A) নদীর জল শুকিয়ে গেছে(B) নদী বর্ষার জলে পরিপুষ্ট হয়ে গেছে(C) নদী যেন খেপে গেছে(D) নদী অপরূপ রূপ ধারণ করেছে
Answer: (C) নদী যেন খেপে গেছে
34. নদীর চাঞ্চল্য ছিল ____ প্রকাশ । ‘(A) বর্ষণ – পুষ্ট মূর্তির (B) পরিপূর্ণতার আনন্দের(C) উন্মত্ততার(D) নূতন সজ্জিত শক্তির
Answer: (B) পরিপূর্ণতার আনন্দের
35. ব্রিজের উপর দিয়ে ট্রেন চলে যাওয়ার শব্দে ঘুম ভেঙে যাওয়ার মতো একটা বেদনাবোধ হল নদেরচাঁদের । কারণ— (A) সেই শব্দ তাকে নৈসর্গিক নিস্তব্ধতা থেকে বাস্তবে ফিরিয়ে এনেছিল (B) সে মন দিয়ে নদীর উন্মত্ততা দেখছিল(C) সে তার জীবনের শূন্যতাকে অনুভব করছিল (D) সে ঘুমিয়ে পড়েছিল
Answer: (A) সেই শব্দ তাকে নৈসর্গিক নিস্তব্ধতা থেকে বাস্তবে ফিরিয়ে এনেছিল
36. ‘ বড়ো ভয় করিতে লাগিল নদেরচাদের । ‘ – ভয়ের কারণ ছিল— (A) অন্ধকার (B) বৃষ্টি (C) নদীর প্রতিহিংসা (D) নদীর স্ফীতি
Answer: (C) নদীর প্রতিহিংসা
37. নদীর জল ছিল -(A) স্বচ্ছ(B) পরিষ্কার(C) ফেনিল (D) পঙ্কিল
Answer: (D) পঙ্কিল
38. এতক্ষণ নদেরচাঁদ যে – নদীর কথা ভাবছিল , তা - (A) বিস্তীর্ণ খরস্রোতা (B) ফেনোচ্ছ্বাসিত স্রোতস্বিনী(C) উন্মত্তা আবর্তসংকুল(D) সংকীর্ণ ক্ষীণস্রোতা
Answer: (D) সংকীর্ণ ক্ষীণস্রোতা
39. যে – প্যাসেঞ্জার ট্রেনটিকে নদেরচাঁদ রওনা করিয়ে — দিয়েছিল , তার সময় ছিল -
(A) চারটে পঁয়তাল্লিশ(B) পাঁচটা কুড়ি (C) চারটে আটচল্লিশ(D) পাঁচটা আটচল্লিশ
Answer: (A) চারটে পঁয়তাল্লিশ
40. নদেরচাঁদ যাকে ডেকে বলল ‘ আমি চললাম হে , সে হল তার – (A) সহকর্মী(B) নতুন সহকারী (C) দারোয়ান চারটে (D) স্ত্রী
Answer: (B) নতুন সহকারী
41. পঁয়তাল্লিশের যে ট্রেনটিকে নদেরচাদ রওনা করিয়ে দিয়েছিল , সেটি ছিল— (A) মেল ট্রেন(B) প্যাসেঞ্জার ট্রেন(C) মালগাড়ি(D) টয় ট্রেন
Answer: (B) প্যাসেঞ্জার ট্রেন
42. স্টেশন থেকে নদীর উপরকার ব্রিজের দূরত্ব হল (A) পাঁচ মাইল (B) তিন কিলোমিটার (C) পাঁচশো মিটার(D) এক মাইল
Answer: (D) এক মাইল
43. অবিরত বৃষ্টি হয়েছিল - (A) পাঁচ দিন ধরে (B) দু – দিন ধরে (C) তিন দিন ধরে (D) সাত দিন ধরে
Answer: (A) পাঁচ দিন ধরে
44. যখন বৃষ্টি থামল , তখন – (A) দুপুর (B) বিকেল (C) রাত্রি (D) ভোর
Answer: (B) বিকেল
45. নদেরচাঁদ নদীকে দেখেনি— (A) তিন দিন (B) পাঁচ দিন (C) সাত দিন(D) এক দিন
Answer: (B) পাঁচ দিন
46. নদেরচাদের ঔৎসুক্য ছিল -(A) ছেলেমানুষের মতো(B) পুরুষদের মতো (C) মহিলাদের মতো(D) বুড়োমানুষের মতো
Answer: (A) ছেলেমানুষের মতো
47. নদেরচাঁদ বাঁচবে না -(A) ব্রিজ থেকে সরে না – গেলে (B) বউকে না – দেখতে পেলে (C) নদীকে না দেখলে(D) নদীর সঙ্গে না খেললে
Answer: (C) নদীকে না দেখলে
48. নদেরচাদের মৃত্যু হয়েছিল— (A) জলে ডুবে (B) ট্রেনের তলায় (C) মোটর দুর্ঘটনায় (D) ব্রিজ ভেঙে
Answer: (B) ট্রেনের তলায়
49. নদীকে বন্দি বলার কারণ - (A) নদীটি দুই তীরের মধ্যে সীমাবদ্ধ বলে(B) নদীটি শীর্ণকায় ও ক্ষীণস্রোতা বলে (C) মানুষ বাঁধ ও ব্রিজ তৈরি করে তার গতি রুদ্ধ করেছে বলে (D) নদীটি ছোটো বলে
Answer: (C) মানুষ বাঁধ ও ব্রিজ তৈরি করে তার গতি রুদ্ধ করেছে বলে
50. যে – ট্রেনটি নদেরচাঁদকে পিষে দিয়েছিল , সেটি ছিল— (A) ৩ নং আপ প্যাসেঞ্জার (B) ৫ নং ডাউন প্যাসেঞ্জার (C) ১০ নং আপ প্যাসেঞ্জার(D) ৭ নং ডাউন প্যাসেঞ্জার
Answer: (D) ৭ নং ডাউন প্যাসেঞ্জার
51. দু – দিকে জলে ডুবে গিয়েছিল— (A) রাস্তা (B) ধানখেত (C) মাঠঘাট(D) বাড়িঘর
Answer: (C) মাঠঘাট
52. নদেরচাঁদ হেঁটে যাচ্ছিল— (A) রেলের উঁচু বাঁধ দিয়ে(B) পাকা রাস্তা দিয়ে(C) নদীর পাড় দিয়ে(D) রেলব্রিজ দিয়ে
Answer: (A) রেলের উঁচু বাঁধ দিয়ে
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | নদীর বিদ্রোহ (গল্প) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় – মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন | Madhyamik Bengali Suggestion :
1. ‘ চোখের পলকে কোথায় যে অদৃশ্য হইয়া গেল চিঠিখানি ! – চিঠির কথা বলা হয়েছে ?
Ans: বর্ষণপুষ্ট জলে ক্ষীণস্রোতা নদীর উন্মত্ততা লক্ষ করে নদেরচাদ তার প্রিয়ার চিঠি স্রোতের মধ্যে ফেলে দেয় । এখানে সেই চিঠির কথাই বলা হয়েছে ।
2. ‘ উন্মত্ততার জন্যই জলপ্রবাহকে আজ তাহার জীবন্ত মনে হইতেছিল , — এই উম্মত্ততার পরিচয় দাও ।
Ans: ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গঙ্গে নদেরচাঁদ শীর্ণকায় যে – নদীকে দেখে অভ্যস্ত ছিল তা বর্ষণপুষ্ট হয়ে প্রতিনিয়ত উম্মত্ত জলপ্রবাহের আবর্ত রচনা করায় সেই জলরাশিকে জীবন্ত বলে মনে হয়েছিল ।
3. ‘ কিছুক্ষণ নদীকে না দেখিলে সে বাঁচিবে না । কথা বলার কারণ কী ?
Ans: এ কথার মধ্য দিয়ে নদেরচাদের সঙ্গে নদীর গভীর বন্ধুত্বকে বোঝানো হয়েছে । একটানা পাঁচ দিন বৃষ্টির পরে নদীকে দেখার জন্য তার মধ্যেকার আকুলতাকে প্রকাশ করছে এই উদ্ধৃতি ।
4. ‘ তা হোক।— কী হওয়ার কথা বলা হয়েছে ?
Ans: ‘ তা হোক ’ শব্দটির সাহায্যে বৃষ্টির পূর্বাভাসকে উপেক্ষা করাকে বোঝানো হয়েছে । পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বর্ষণের শেষে নদীকে দেখার সুযোগ নদেরচাঁদ কোনো মতেই হাতছাড়া করতে চায় না ।
5. ‘ রেলের উঁচু বাঁধ ধরিয়া হাঁটিতে হাঁটিতে … –হাঁটতে হাঁটতে নদেরচাঁদ কী ভাবছিল ?
Ans: পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির ফলে নদেরচাঁদের নদী দেখা হয়নি । বৃষ্টি থামলে নদীকে দেখতে যাওয়ার সময় দু – দিকের মাঠঘাট দেখে সে বর্ষণ – পুষ্ট নদীর পরিপূর্ণ রূপের কথা ভাবছিল ।
6. ” ত্রিশ বছর বয়সে নদীর জন্য নদেরচাঁদের এত বেশি মায়া একটু অস্বাভাবিক / —এ কথা বলার কারণ কী ছিল ?
Ans: ‘ নদীর বিদ্রোহে ‘ নদেরচাদের নদীকে নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের ঔৎসুক্যবোধ অনেকটা ছেলেমানুষের মতো । ত্রিশ বছর বয়সে নদীকে নিয়ে নদেরচাদের এতটা মায়া একটু অস্বাভাবিকই লাগে ।
7. ‘ কেবল বয়সের জন্য নয় , বয়স ছাড়া আর কোন কোন কারণ উল্লেখ করা হয়েছে ?
Ans: নদেরচাঁদ একজন স্টেশনমাস্টার । মেল , প্যাসেঞ্জার , মালগাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করা তার কাজ । যন্ত্রের গতি নির্ধারণ যার কাজ , তার এতটা আবেগপ্রবণ হওয়াটা খুব স্বাভাবিক লক্ষণ নয় ।
8. ‘ তার সঙ্গে খেলায় যোগ দিয়া কোন খেলার কথা বলা হয়েছে ?
Ans: একটানা বর্ষায় ফুলেফেঁপে ওঠা নদীর উম্মত্ত জলরাশিতে পুরোনো চিঠি খেলার ছলে ছিঁড়ে ছিঁড়ে ফেলেছিল নদেরচাঁদ । এখানে সেই খেলার কথা বলা হয়েছে ।
9. ‘ চিঠি পকেটেই ছিল / – কোন চিঠির কথা বলা হয়েছে ?
Ans: বর্ষার সঙ্গে বিরহের সুর মিলিয়ে বাড়ি থেকে বহুদুরে কর্তব্যরত স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদ তার বউকে পাঁচ পাতার একটি চিঠি লিখেছিল । এখানে সেই চিঠির কথাই বলা হয়েছে ।
10. ‘ নদের চাঁদ ছেলেমানুষের মতো ঔৎসুক্য বোধ করিতে লাগিল ।’— ‘ ছেলেমানুষের মতো ‘ বলার কারণ কী ?
Ans: ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পে অবিশ্রান্ত বৃষ্টির কারণে নদীকে দেখতে না পেয়ে নদেরচাদের মধ্যে যে আকুলতা সৃষ্টি হয়েছিল , তা সাধারণত কোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে দেখা যায় না । এই আগ্রহ বা ঔৎসুক্যবোধকেই ‘ ছেলেমানুষের মতো ‘ বলা হয়েছে ।
11. ‘ নিজের এই পাগলামিতে যেন আনন্দই উপভোগ করে । কোন পাগলামির কথা বলা হয়েছে ।
Ans: নদেরচাঁদের নদী সম্পর্কে একটা শিশুসুলভ উন্মাদনা ছিল । নদীর সামান্য অদর্শনে সে অধৈর্য হত । অন্যের কাছে এটা পাগলামি মনে হলেও , সে নিজে এই পাগলামিতে আনন্দ পেত ।
12. ‘ প্রথমবার নদীর দিকে দৃষ্টিপাত করিয়াই … —‘প্রথমবার ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
Ans: ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্প অনুসারে , ‘ প্রথমবার ‘ বলতে পাঁচ দিন মুশলধারে বৃষ্টির পর নদেরচাঁদ প্রথম যখন নদীকে দেখে ও তার উন্মত্ততা অনুভব করে , সে কথাই বোঝানো হয়েছে ।
13. ‘ নদীর পঙ্কিল জলস্রোতে সে চাঞ্চল্য দেখিয়া গিয়াছে’— এই চাঞ্চল্যের স্বরূপ কী ছিল ?
Ans: নদেরচাঁদ বর্ষণপুষ্ট নদীর পঙ্কিল জলস্রোতের চাঞ্চল্য দেখেই বুঝেছিল সারাবছরের ক্ষীণস্রোতা নদীটির বর্ষার জলে পরিপূর্ণতার কাহিনি যেন তার চাঞ্চল্যের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হচ্ছিল ।
14. ‘ একটা কৈফিয়ত নদেরচাঁদ দিতে পারে ।’— কৈফিয়ত দেওয়ার প্রয়োজন কী ছিল ?
Ans: নদীর প্রতি নদেরচাঁদের তীব্র আকর্ষণ বাস্তববাদী মানুষের মনে প্রশ্ন জাগাতে পারে । তাই একটা কৈফিয়ত দেওয়া যে প্রয়োজন , তা সে অনুভব করে ।
15. নদেরচাদ স্তম্ভিত হইয়া গেল । — নদেরচাঁদ কেন স্তম্ভিত হয়ে গেল ?
Ans: পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির পরে নদীর ধারে গিয়ে আপাতশাস্ত নদীর উন্মত্ত রূপ দেখে নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল ।
16. ” আজ যেন সেই নদী খেপিয়ে গিয়াছে , কোন্ নদীর কথা বলা হয়েছে ?
Ans: ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পের নায়ক নদেরচাদের কর্মস্থল থেকে মাইলখানেক দুরে তার প্রিয় নদীটি অবস্থিত ছিল । এখানে সেই নদীটির কথা বলা হয়েছে ।
17. ‘ আজ যেন সেই নদী খেপিয়া গিয়াছে— ‘ আজ ‘ বলতে কোন দিনের কথা বলা হয়েছে ?
Ans: ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পে ‘ আজ ‘ বলতে পাঁচদিনের অঝোরধারায় বৃষ্টির পর যেদিন নদেরচাঁদ প্রথম নদীকে দেখতে গিয়েছিল , সেই দিনটির কথা বলা হয়েছে ।
18. ‘ কিন্তু সে চাঞ্চল্য যেন ছিল পরিপূর্ণতার আনন্দের প্রকাশ।— কোন্ পরিপূর্ণতার কথা বলা হয়েছে ?
Ans: নদীর পরিপূর্ণতা তার জলরাশির উচ্ছলতায় । নদেরচাদ বর্ষার জলে পুষ্ট নদীর যে চাঞ্চল্য লক্ষ করেছিল , সেই পরিপূর্ণতার কথা এক্ষেত্রে বলা হয়েছে ।
19. ‘ নিজেকে কেবল বুঝাইতে পারে না । নিজেকে কী বোঝাতে পারে না নদেরচাঁদ ?
Ans: প্রাপ্তবয়স্ক নদেরচাদ ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের সঙ্গে যুক্ত । তার নদীকে দেখার মতো শিশুসুলভ ঔৎসুক্য সাজে না – এ কথা সে মনকে বোঝাতে পারে না ।
20. ‘ অস্বাভাবিক হোক –কোন্ বিষয়কে অস্বাভাবিক বলা হয়েছে ?
Ans: নদেরচাদ স্টেশনমাস্টারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিল । বর্ষণপুষ্ট নদীকে একটানা পাঁচ দিন না দেখার জন্য তার মধ্যে যে শিশুসুলভ উন্মত্ততা দেখা দিয়েছিল সেটাই অস্বাভাবিক ।
21. ‘ মানুষ যেমন কাঁদে কে , কেন কেঁদেছিল ?
Ans: পরমাত্মীয়কে দুরারোগ্য রোগে মারা যেতে দেখলে মানুষ যেমন কাঁদে , নদেরচাঁদও অনাবৃষ্টিতে তার গ্রামের ক্ষীণস্রোতা নদীটিকে শুকিয়ে যেতে দেখে তেমনি কেঁদে ফেলেছিল ।
22. ‘ চিরদিন নদীকে সে ভালোবাসিয়াছে । নদীকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে নদেরচাঁদের চরিত্রের কোন দিকটি প্রকাশিত ?
Ans: ত্রিশ বছর বয়সি নদেরচাদের নদীর প্রতি তীব্র ভালোবাসা অস্বাভাবিক হলেও নদেরচাঁদ প্রকৃতিপ্রেমী ও আবেগপ্রবণ । তাই সংবেদনশীল শিল্পী চরিত্রদের মতোই সে নদীকে ভালোবেসেছে ।
23. “ আজ যেন সেই নদী খেপিয়া গিয়াছে , — নদীর খেপে যাওয়ার কারণ কী ?
Ans: ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পে সারাবছর জলাভাবে ভুগতে থাকা ক্ষীণস্রোতা নদীটি একটানা পাঁচদিনের বৃষ্টিতে ফুলেফেঁপে উঠেছিল । এটাই নদীর খেপে যাওয়ার কারণ ।
24. ‘ নদেরচাদ একটি সংকীর্ণ ক্ষীণস্রোতা নদীর কথা ভাবিতেছিল ।’— কোন্ নদীর কথা বলা হয়েছে ?
Ans: নদেরচাঁদ তার কর্মস্থলের অনতিদূরে চার বছর ধরে একটি ক্ষীণস্রোতা নদীকে দেখে আসছে । টানা পাঁচ দিনের বৃষ্টিতে সেই নদী ফুলেফেঁপে উঠলেও দাঁড়িয়ে সে সেই ক্ষীণস্রোতা নদীটির কথাই ভাবছিল ।
25. “ তার চার বছরের চেনা এই নদীর মূর্তিকে তাই যেন আরও বেশি ভয়ংকর , আরও বেশি অপরিচিত মনে হইল।— তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো ।
Ans: নদেরচাদের কর্মক্ষেত্রের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ক্ষীণস্রোতা নদীটিকে সে প্রতিদিন দেখত । পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বর্ষণে সে নদীর জল ফুলেফেঁপে ভয়ংকর রূপ ধারণ করলে চার বছরের চেনা নদীটিকে নদেরচাদের অচেনা লাগে ।
26. দীকে ভালোবাসার পিছনে নদেরচাদের কী কৈফিয়ত ছিল ?
Ans: নদেরচাদের নদীর প্রতি আকর্ষণ , শিশুসুলভ পাগলামি হলেও এর পিছনে তার একটি নিজস্ব যুক্তি ছিল । কারণ তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা নদীর ধারেই । তাই তার নদীর প্রতি এই ভালোবাসা আবাল্য ।
27. কিন্তু শৈশবে , কৈশোরে , আর প্রথম যৌবনে বড়োছোটোর হিসাব কে করে ? ‘ — উল্লিখিত সময়ে বড়ো ছোটোর হিসাব না করার কারণ কী ?
Ans: শৈশব , কৈশোর ও প্রথম যৌবনে মানুষ বুদ্ধি – বিবেচনার পরিবর্তে ব্যক্তিমনের আবেগ – আকাঙ্ক্ষাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয় । তাই তার কাছে তখন ছোটো – বড়ো , ভালোমন্দের চেয়ে বেশি মূল্যবান নিজের ভালোলাগা ।
28. সে প্রায় কাঁদিয়া ফেলিয়াছিল ; — তার কেঁদে ফেলার কারণ কী ?
Ans: ‘ নদীর বিদ্রোহ ’ গল্পের নায়ক নদেরচাদের ছোটোবেলা থেকেই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটির সঙ্গে ভারি বন্ধুত্ব । একবার অনাবৃষ্টিতে নদীর জলস্রোত প্রায় শুকিয়ে যেতে বসায় সে কেঁদে ফেলেছিল ।
29. ‘ অসুস্থ দুর্বল আত্মীয়ার মতোই তার মমতা পাইয়াছিল।— কাকে , কেন ‘ অসুস্থ দুর্বল আত্মীয়া ‘ বলা হয়েছে ?
Ans: নদেরচাঁদ যে – নদীর ধারে জন্মেছে , বড়ো হয়েছে , যাকে ভালোবেসেছে , সেই নদীটি বর্ষণপুষ্ট নদীর মতো বড়ো ছিল না । ক্ষীণস্রোতা নদীটি নদেরচাদের কাছে ছিল অসুস্থ , দুর্বল আত্মীয়ার মতো ।
30. ‘ নদীটি অসুস্থ দুর্বল আত্মীয়ার মতোই তার মমতা পাইয়াছিল । নদীটির এই মমতা পাওয়ার কারণ কী ?
Ans: নদেরচাদের আবাল্যের সঙ্গী নদীটির স্রোতধারা ছিল অতি ক্ষীণ । তাই অসুস্থ , দুর্বল আত্মীয়ের প্রতি মানুষের যেমন সহানুভূতি ও মমতা থাকে , নদেরচাদের ও নদীটির প্রতি তাই ছিল ।
31. সেই ক্ষীণস্রোতা নির্জীব নদীটি — কোন নদীর কথা বলা হয়েছে ?
Ans: আলোচা উদ্ধৃতিটিতে নদেরচাদের দেশের সরু , ক্ষীণস্রোতা নদীটির সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে । আবাল্যের সঙ্গী এই নদীটিকে সে নিজের অসুস্থ ও দুর্বল আত্মীয়ার মতো গণ্য করত ।
32. ‘ সে প্রতিদিন নদীকে দেখে । – ‘ সে ’ কে ? সে কোন্ নদীকে কেন দ্যাখে ?
Ans: ‘ সে ’ হল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র নদেরচাঁদ । ” নদেরচাঁদ তার কর্মক্ষেত্র থেকে মাইলখানেক দূরের নদীটিকে প্রতিদিন দেখত । কারণ এমনই এক নদীর ধারে তার শৈশব কেটেছিল ।
33. ‘ আজও সে সেইখানে গিয়া বসিল / – কে , কোথায় প্রশ্ন গিয়ে বসল ।
Ans: স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদের তার কাজের অবসরে কর্মক্ষেত্র থেকে মাইলখানেক দূরে নদীর উপরকার ব্রিজের মাঝামাঝি ধারকস্তম্ভের শেষ প্রান্তে এসে বসল ।
34. ধারকস্তত্ত্বের শেষপ্রান্তে বসিয়া সে প্রতিদিন নদীকে দেখে তার প্রতিদিন নদীকে দেখার কারণ কী ?
Ans: নদেরচাদের নদীর সঙ্গে সখ্য ছোটোবেলার , তার গ্রামে থাকাকালীন । কর্মস্থলে এসেও সে তা ভুলতে পারেনি । তাই নদীকে সে প্রতিদিন না দেখে থাকতে পারত না ।
35. আজ্ঞে না । বস্তুার এই কথাটি বলার প্রসঙ্গ প্রশ্ন । উল্লেখ করো ।
Ans: নদেরচাদ বিকেলের প্যাসেঞ্জার ট্রেনটিকে পাস করিয়ে , দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার সময় সহকারীকে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে সহকারী উদ্ধৃত উক্তিটি করেন ।
36. ‘ পাঁচ দিন নদীকে দেখা হয় নাই । — এই উদ্ধৃতির মধ্য দিয়ে নদেরটাদের যে আন্তরিক আকুতি ফুটে উঠেছে , তার পরিচয় দাও ।
Ans: নদেরচাদের ছোটো থেকেই নদীর প্রতি বড়ো টান । পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির জন্য সে নদীর কাছে যেতে পারেনি । তাই বৃষ্টি থামতেই নদীকে দেখার জন্য সে উৎসুক হয়ে উঠল ।
37. ‘ এত উঁচুতে জল উঠিয়া আসয়িাছে যে … ! – জল উঁচুতে উঠে এসেছে কেন ?
Ans: ক্ষীণস্রোতা নদীর উপর নির্মিত ব্রিজের ধারকস্তম্ভগুলিতে বর্ষার সময় নদীর স্রোত বাধা পায় এবং ফেনিল আবর্ত রচনা করে । তাই জল উঁচুতে উঠে আসে ।
38 ‘ নদেরচাদের ভারী আমোদ বোধ হইতে লাগিল । -নদেরচাঁদের আমোদ বোধ হওয়ার কারণ কী ?
Ans: ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্প অনুসারে ব্রিজের ধারকস্তম্ভে বসে নদেরচাঁদ বারবার স্তম্ভের গায়ে আঘাত খেয়ে বর্ষণপুষ্ট নদীর ফুলে ওঠা জল ছুঁতে চেষ্টা করছিল । এতেই সে আমোদিত হয়ে উঠেছিল ।
39. ” সে স্রোতের মধ্যে ছুড়িয়া দিল ।’— ‘ সে ‘ কে ? সে স্রোতের মধ্যে কী ছুড়ে দিল ?
Ans: ‘ সে ‘ হল ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পের স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদ ।
চিরপরিচিত ক্ষীণকায় নদীকে বর্ষার জলে ফুলেফেঁপে উঠতে দেখে উৎফুল্ল নদেরচাঁদ পুরোনো চিঠি সেই উন্মত্ত স্রোতের মধ্যে ছুড়ে দিয়েছিল ।
40. একটু মমতা বোধ করিল বটে , ‘ — কী বিষয়ে মমতা বোধ করার কথা বলা হয়েছে ?
Ans: উন্মত্ত নদীর জলে , স্ত্রীকে লেখা বিরহ – বেদনাপূর্ণ চিঠির এক – একখানি পাতা ছিঁড়ে দুমড়ে – মুচড়ে ফেলে দেওয়ার সময় নদেরচাদ স্ত্রীর প্রতি মমতাবোধ করেছিল ।
41. ‘ লোভটা সে সামলাইতে পারিল না , ‘ — কোন্ লোভের কথা বলা হয়েছ ?
Ans: এখানে ‘ লোভ ’ বলতে উন্মত্ত নদীর সঙ্গে নদেরচাদের খেলার লোভের কথা বলা হয়েছে । সেই লোভের বশবর্তী হয়ে নদেরচাঁদ স্ত্রীকে লেখা চিঠির পাতাগুলো একের পর এক নদীতে ছুড়ে ফেলেছিল ।
42. ‘ উঠল না— কে , কোথা থেকে উঠল না ?
Ans: ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পে স্ফীতকায় জলরাশির সঙ্গে খেলতে খেলতে আত্মহারা নদেরচাঁদ প্রবল বৃষ্টিতে ভিজতে থাকলেও এক অজানা আত্মিক টানে নদীর ধার ছেড়ে উঠল না ।
43. ‘ নদেরচাদের মন হইতে ছেলেমানুষি আমোদ মিলাইয়া গেল , ‘ — নদেরচাদের মন থেকে আমোদ মিলিয়ে গেল কেন ?
Ans: ব্রিজের ধারকস্তম্ভের ওপর বসে উত্তাল নদী থেকে উঠে আসা শব্দের সঙ্গে বৃষ্টির শব্দ মিশে তৈরি হওয়া শব্দ শুনতে শুনতে নদেরচাদের মন থেকে ছেলেমানুষি আমোদ মিলিয়ে গিয়েছিল ।
44. ‘ তারপর সে অতিকষ্টে উঠিয়া দাঁড়াইল ।’— ‘ তারপর বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
Ans: নদী আর বৃষ্টির শব্দ মিলেমিশে নদেরচাঁদকে আচ্ছন্ন করে দিয়েছিল । এমন সময় ব্রিজের ওপর দিয়ে সশব্দে একটা ট্রেন চলে যায় । উদ্ধৃতাংশে ‘ তারপর ‘ বলতে এর পরকেই বুঝিয়েছে ।
45. ‘ আজও সে সেইখানে গিয়া বসিল ‘ আজও বলার কারণ কী ?
Ans: নদীর প্রতি অমোঘ আকর্ষণে নদেরচাঁদ প্রতিদিন নদীকে দেখতে যেত । পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টিতে তাতে ছেদ পড়ে । ষষ্ঠ দিনে বৃষ্টি কমলে সে আবার সেই একই জায়গায় গিয়ে বসে । ‘ আজ ‘ বলতে উক্ত দিনটিকে বোঝানো হয়েছে ।
46. মনে হয় ইচ্ছা করিলে ‘ — কোন ইচ্ছার কথা বলা হয়েছে ?
Ans: বৃষ্টি শেষে নদীর ধারকস্তম্ভে বসে নদেরচাদ নদীকে দেখছিল । নদীর জলরাশি মাঝেমধ্যে ফুলেফেঁপে উঠছিল । সেই ফুলেফেঁপে ওঠা জলরাশিকে স্পর্শ করার ইচ্ছার কথা বলা হয়েছে ।
47. ‘ আমি চললাম হে ! – কে , কাকে এ কথা বলেছে ?
Ans: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ নদীর বিদ্রোহ ’ গল্পের স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদ চারটে পঁয়তাল্লিশের প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি রওনা করিয়ে , তার সহকারীকে কর্তব্যভার বোঝানোর সময় তাকে এ কথা বলেছে ।
48. ‘ আজ্ঞে হ্যাঁ ।’— কে , কোন্ প্রসঙ্গে এই কথাটি বলেছিল ?
Ans: ‘ নদীর বিদ্রোহ ’ গল্পে স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদ চারটে পঁয়তাল্লিশের প্যাসেঞ্জার ট্রেনটিকে পাস করিয়ে নতুন সহকারীকে তার দায়িত্ব বুঝিয়ে চলে যাবার কথা জানায় । উত্তরে সহকারী সম্মতিসূচক উক্তিটি করে ।
49. ‘ বড়ো ভয় করিতে লাগিল নদেরচাদের / – নদের চাঁদ ভয় পেল কেন ?
Ans: বর্ষার জলে উদ্বৃত্ত নদীর রোষে – ক্ষোভে ফুঁসে ওঠা রূপ দেখে দিশেহারা নদেরচাদের ভয় হয়েছিল নদীর আর্তনাদি জলরাশি যেন গোটা ব্রিজটিকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে ।
50. ‘ তাহার উচিত হয় নাই।- তার কী করা উচিত হয়নি ?
Ans: ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র নদের চাঁদের ক্ষোভে উন্মত্ত নদীর আর্তনাদি জলরাশির কয়েক হাত উঁচুতে ধারকস্তম্ভের ওপর এমন নিশ্চিন্ত মনে বসে থাকা উচিত হয়নি ।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর | নদীর বিদ্রোহ (গল্প) মানিক বন্দোপধ্যায় – মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন | Madhyamik Bengali Suggestion :
1. ‘ ত্রিশ বছর বয়সে নদীর জন্য নদেরচাদের এত বেশি মায়া একটু অস্বাভাবিক ।’— ‘ এত বেশি মায়া ’ বলার কারণ কী ? সেই মায়াকে অস্বাভাবিক বলা হয়েছে কেন ?
Answer: নদেরচাঁদ নদীকে না দেখে একদিনও থাকতে পারত না । নদী ‘ এত বেশি মায়া’ বলার কারণ দেখার নেশা তার যেন পাগলামিতে পরিণত হয়েছিল । তাই তার এই পাগলামিকে ‘ এত বেশি মায়া ‘ বলা হয়েছে ।
‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পানুসারে , ত্রিশ বছর বয়সের যে – কোনো ব্যক্তি দৈহিক ও মানসিকভাবে যথেষ্ট প্রাপ্তবয়স্ক ও প্রাপ্তমনস্ক । প্রশ্নোবৃত মায়া অস্বাভাবিক কেন নদীর জন্য নদেরচাদের শিশুসুলভ আকুতি তার বয়সের মানুষের মধ্যে সাধারণত দেখা যায় না । তাই এই কথা বলা হয়েছে ।
2. ‘ ছোটো হোক , তুচ্ছ হোক , ‘ ‘ ছোটো ‘ ও ‘ তুচ্ছ কাকে বলা হয়েছে ? কোন প্রসঙ্গে এই কথা বলা হয়েছে ?
Answer: নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পের মুখ্যচরিত্র নদেরচাঁদ যে অখ্যাত , অনামা স্টেশনের স্টেশনমাস্টার , সেই স্টেশনটি সম্পর্কে ‘ ছোটো ’ ও ‘ তুচ্ছ ‘ বিশেষণ দুটি ব্যবহার করা ‘ ছোটো ‘ ও ‘ তুচ্ছ ‘ হয়েছে । প্রসঙ্গের উল্লেখ → নদেরচাঁদ যথেষ্ট প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া সত্ত্বেও নদীর প্রতি তার আকর্ষণ ছিল লাগামছাড়া । নদীকে নিয়ে তার শিশুসুলভ আচরণ প্রসঙ্গে লেখক বলেছেন যে স্টেশন যত ছোটোই হোক স্টেশনমাস্টারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন নদেরচাঁদের নদীকে নিয়ে এই পাগলামি সাজে না । এই প্রসঙ্গে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি ব্যবহৃত হয়েছে
3. ‘ নদীকে এভাবে ভালোবাসিবার একটা কৈফিয়ত নদেরচাদ দিতে পারে ।’— কৈফিয়তটি কী ? কৈফিয়ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়েছিল কেন ?
Answer: নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র নদেরচাদের জন্ম , বেড়ে ওঠা— সবই নদীকে ঘিরে । তার দেশের যে শীর্ণকায় ক্ষীণস্রোতা নদীটিকে কৈফিয়তটি বাঁ সে বড়ো ভালোবাসত । সেইজন্য কর্মক্ষেত্রের নদীসহ যে কোনো নদীর প্রতিই তার অস্বাভাবিক মায়া ছিল । নদীকে এমন পাগলের মতো ভালোবাসার জন্য সে এমন কৈফিয়তই দিয়েছিল ।
রেল নিয়ন্ত্রণের মতো দায়িত্বপূর্ণ কাজে যুক্ত একজন প্রাপ্তবয়স্কের নদীকে নিয়ে এমন পাগলামো সকলে স্বাভাবিকভাবে নেবে না তাই নদেরচাদ নিজেই কৈফিয়ত দিয়েছিল ।
4. ‘ আজ যেন সেই নদী খেপিয়া গিয়াছে পূর্ব রূপ ও পরবর্তী রূপ বর্ণনা করো ।
Answer: একটানা পাঁচদিন পর নদীর দিকে প্রথমবার দৃপা করে নদীর পূর্ব প ও পরবর্তী রূপ নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হয়ে গেল । বর্ষার জল পেয়ে উচ্ছ্বসিত নদীর পঙ্কিল জলে সে যে উল্লাস ও চঞ্চলতা দেখে গিয়েছিল , একটানা বৃষ্টির পর সেই উল্লাস ও চঞ্চলতা যেন পরিণত হয়েছে ফুঁসতে থাকা ভয়ংকরতায় । আগের চঞ্চলতায় ছিল পরিপূর্ণতার উল্লাস ; কিন্তু এখন নদী যেন খেপে উঠেছে । গাঢ় কালো পৰিকূল জল ফুলেফেঁপে তরঙ্গায়িত হয়ে ছুটে চলেছে ।
5. কিন্তু সে চাঞ্চলা যেন ছিল পরিপূর্ণতার আনলের প্রকাশ । –কোন চাঞ্চল্যের কথা বলা হয়েছে ? ‘ পরিপূর্ণতার আনন্দ ‘ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
Answer: পাঁচদিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টি হওয়ার আগে নদেরচাঁদ তার প্রিয় নদীটিকে বর্ষার জলে পরিপুষ্ট আর পাঁচটা সাধারণ নদীর মতো পরিপূর্ণতার আনন্দে চঞ্চল হয়ে উঠতে দেখেছিল । এখানে সেই চাঞ্চল্যের কথা বলা হয়েছে ।
সারাবছরই নদীগুলি জলাভাবে অপুষ্ট থাকে । তাদের মধ্যেকার পূর্ণতার আনন্দ যেন অধরা থাকে । কিন্তু বর্ষার নব জলধারায় পুষ্ট হয়ে তাদের মধ্যে আসে পরিপূর্ণতার আনন্দ । তাদের প্রবাহে আসে উল্লাস , চলায় আসে ছন্দ , এসব কিছুকেই পরিপূর্ণতার আনন্দ বলা হয়েছে ।
6. তার চার বছরের চেনা এই নদীর মূর্তিকে তাই যেন আরও বেশি ভয়ংকর , আরও বেশি অপরিচিত মনে হইল / -চার বছরের চেনা ‘ বলার কারণ কী ? আরও বেশি ভয়ংকর , আরও বেশি অপরিচিত মনে হল কেন ?
Answer: চার বছর হল নদেরচাঁদ স্টেশনমাস্টারের দায়িত্বভার গ্রহণ ” চার বছরের চেনা ” করে এই অঞ্চলে এসেছে । তাই নদীটির সঙ্গে তার বলার কারণ চার বছরের চেনা । → নদেরচাদ তার কর্মস্থলের অনতিদূরে অবস্থিত বর্ষার জলে পৃষ্ট নদীটিতে পাঁচদিন আগে পঙ্কিল জলস্রোতে যে – চাঞ্চল্য দেখে গিয়েছিল তাতে ছিল পরিপূর্ণতার আনন্দ । কিন্তু পাঁচদিন আরও বেশি অপরিচিত অবিশ্রান্ত বৃষ্টির পর সে চেনা নদীর রূপই প্রত্যক্ষ করবে ভেবেছিল , কিন্তু নদেরচাঁদ দেখল নদী আরও বেশি ভয়ংকর , আরও বেশি ভয়ংকর ও অপরিচিত হয়ে উঠেছে ।
7. নদেরচাঁদের দেশের নদী ও কর্মক্ষেত্রের নদীটির মধ্যে একটি তুলনামূলক আলোচনা করো ।
Answer: নদেরচাঁদ তার দেশের যে – নদীটির পাশে জন্ম নিয়েছে ও বেড়ে উঠেছে , সেই নদীটি অতি ক্ষীণকায়া । অসুস্থ দুর্বল আত্মীয়ার মতো নদেরচাঁদ তাকে ভালোবাসত । একবার অনাবৃষ্টির সময় সেই নদীর ক্ষীণস্রোত প্রায় শুকিয়ে যেতে দেখে নদেরচাঁদ কেঁদে ফেলেছিল । অন্যদিকে , তার কর্মক্ষেত্র থেকে এক মাইল দূরে যে – নদীটিকে দেখতে নদেরচাঁদ বারবার ছুটে যেত , সেই নদীটি ছিল কর্মক্ষেত্রের নদী তুলনায় বড়ো । বর্ষায় জল পেয়ে সেই নদী ফুলেফেঁপে উঠে দু – কূল ভাসিয়ে দিত ।
8. ‘ ব্রিজের কাছাকাছি আসিয়া প্রথমবার নদীর দিকে দৃষ্টিপাত করিয়াই নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হইয়া গেল ।’- কোন্ ব্রিজের কথা বলা হয়েছে ? সেখানে এসে নদেরচাঁদ কী দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেল ?
Answer: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পের মুখ্য চরিত্র গল্পে উদ্ধৃত ব্রিজের পরিচয় । নদেরচাদ যে অখ্যাত স্টেশনের স্টেশনমাস্টার ছিল সেখান থেকে মাইলখানেক দূরে নদীর ওপর যে – নতুন ব্রিজটি তৈরি হয়েছিল এখানে তার কথা বলা হয়েছে । নদেরচাদের স্তম্ভিত ( একটানা পাঁচদিন বৃষ্টির পর নদেরচাদ নদীটিকে দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায় । ক – দিন আগে সে নদীর পঙ্কিল জলের যে উল্লাস ও চঞ্চলতা দেখে গিয়েছিল আজ অতিবৃষ্টির পর তা যেন পরিণত হয়ে ভয়ংকরভাবে ফুঁসছে ।
9. সেও তো তাহাদেরই একজন , ‘ — ‘ সে ‘ কে ? তাকে কাদের একজন বলা হয়েছে ?
Answer: সে ’ বলতে এখানে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘ নদীর বিদ্রোহ গল্পের ত্রিশ বছর বয়সি স্টেশনমাস্টার নদেরচাদকে ‘ সে ‘ কে বোঝানো হয়েছে । প্রশ্নোত ব্যক্তি কাদের একজন [ ] নদেরচাদ একটি স্টেশনের স্টেশনমাস্টার ছিল । স্টেশনমাস্টারের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । কারণ দিনরাত সব মেল , প্যাসেঞ্জার ট্রেন ও মালগাড়ির আসা – যাওয়া নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যাদের হাতে , তাদেরই একজন হলেন স্টেশনমাস্টার । কাজেই এই দায়িত্বপ্রাপ্ত নদেরচাঁদের নদী নিয়ে পাগলামি মানায় না বলে লেখক জানিয়েছেন ।
10. নদেরচাদ সব বোঝে , নিজেকে কেবল বুঝাইতে পারে না । –নদেরচাঁদ কী বোঝে ?
Answer: নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র নদেরচাঁদের বয়স ত্রিশ । সে একটি দায়িত্বপূর্ণ পদে কর্মরত । এইরকম অবস্থায় নদীর প্রতি তার এই বাড়াবাড়ি রকমের ভালোবাসা যে তাকে মানায় না তা সে বোঝে ।
নদেরচাঁদের জন্ম , বেড়ে ওঠা ও ভালোবাসা সব কিছুই নদীকে ঘিরে । নদীকে নিয়ে সে এক ভাবের জগতে বাস করত । নদীর প্রতি এত বেশি মায়া অস্বাভাবিক জেনেও ; নদীর অদর্শনে সে অতৃপ্ত থাকত । তার পক্ষে এমন ঔৎসুক্য ঠিক নয় এ কথা টের পেলেও সে নিজেকে বোঝাতে পারত না । বরং নিজের এই পাগলামিতে সে এক অনাবিল আনন্দ উপভোগ করত ।
11. ‘ নিজের এই পাগলামিতে যেন আনন্দই উপভোগ করে । — নদেরচাদের মনের এই আনন্দের স্বরূপ পরিস্ফুট করো ।
Answer: গ্রামবাংলার ছেলে নদেরচাদের জন্ম , শৈশব , বেড়ে ওঠা , আশা – আকাঙ্ক্ষা সবই নদীকে কেন্দ্র করে । নদীর সঙ্গে তার আত্মিক সম্পর্ক । নদীর ক্ষীণধারা দেখে বর্ষণপষ্ট স্ফীতকায় নদী তার মনে পুলক জাগায় । নদীর প্রতি এইরূপ প্রেম তার যে সাজে না এ কথা সে বুঝলেও তার মনকে বোঝাতে পারে না । কোথাও যেন নিজের এই পাগলামিতে সে আনন্দ উপভোগ করে ।
12. …. ট্রেনটিকে রওনা করাইয়া দিয়া …– কোন্ ট্রেনটির কথা বলা হয়েছে ? ট্রেনটিকে রওনা করানোর পর কী ঘটল ?
Answer: ‘ নদীর বিদ্রোহ ’ গল্প থেকে উদ্ধৃত অংশে চারটে পঁয়তাল্লিশ মিনিটের প্যাসেঞ্জার ট্রেনটির কথা বলা হয়েছে । ট্রেন রওনা হওয়ার পরবর্তী ঘটনা ট্রেনটিকে রওনা করানোর পর স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদ তার নতুন সহকারীকে নিজের প্রস্থান করার কথা জানায় । তারপর আর হয়তো বৃষ্টি হবে না , এই অনুমান ব্যক্ত করে সহকারীর সমর্থন প্রত্যাশা করে । সহকারীও সহমত ব্যক্ত করলে সে নদীর দিকে রওনা হয়ে যায় ।
13. ‘ আজ্ঞে হ্যাঁ ‘ ও ‘ আজ্ঞে না ” এই দুই সংক্ষিপ্ত বক্তরা থেকে নদেরচাদের সহকারীর চরিত্র সম্পর্কে কী ধারণা করা যায় , তা সংক্ষেপে লেখো ।
Answer: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পটির প্রধান ও প্রায় একমাত্র চরিত্র হল নদেরচাঁদ । সে ছাড়া আর একটি যে অতিসংক্ষিপ্ত মানবচরিত্র এই গল্পে দেখা যায় , সে হল তার নদেরচাদের সহকারী চরিত্র সহকারী । লেখকের বিবৃতি থেকেই জানা যায় সহকারী নতুন নিযুক্ত । সে খুব সাধারণ অধস্তন কর্মচারীর মতোই তার ঊর্ধ্বতন পদাধিকারীর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে তার বক্তব্যে সহমত জ্ঞাপন করেছে ।
14. ব্রিজের দিকে হাঁটিতে লাগিল । — কোন্ ব্রিজের কথা বলা হয়েছে ? সেই ব্যক্তি ব্রিজের দিকে হাঁটতে লাগল কেন ?
Answer: ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্প থেকে উদ্ধৃত অংশে নদেরচাঁদ যে – স্টেশনের ব্রিজের স্টেশনমাস্টার , সেখান থেকে এক মাইল দূরে নদীর ওপরে নতুন তৈরি ব্রিজটির কথা বলা হয়েছে । ব্রিজের দিকে হাঁটার কারণ
নদেরচাঁদ ছিল প্রকৃতিপ্রেমিক । বিশেষত নদীর প্রতি তার ছিল অপরিসীম আকর্ষণ । সে প্রায় রোজই নদীর পাশে বসে সময় কাটায় । বিগত পাঁচদিন ধরে মুশলধারায় বৃষ্টির জন্য সে নদীকে দেখতে যেতে পারেনি । তাই কিছুক্ষণের জন্য বৃষ্টি থামতেই সে নদীকে দেখার উদ্দেশ্যে রওনা হয় ।
15. ‘ নদের চাঁদ ছেলেমানুষের মতো ঔৎসুক্য বোধ করিতে লাগিল ।— ‘ ছেলেমানুষের মতো বলার কারণ কী ? নদেরচাদের ঔৎসুক্য হয়েছিল কেন ?
Answer: চঞ্চলমতি শিশুদের ধৈর্য খুবই কম । খুব অঙ্গেই তাদের ” ছেলেমানুষের মতো ধৈর্যচ্যুতি ঘটে । নদেরচাঁদও একটানা পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বর্ষণের ফলে নদীকে দেখতে না পেয়ে অধৈর্য হয়ে পড়ে । বয়সের তুলনায় তার এই অধৈর্যকে লেখক ছেলেমানুষির সঙ্গে তুলনা করেছেন । → শৈশব থেকেই নদীর সঙ্গে নদেরচাঁদের সখ্য । তাঁর কর্মস্থলের নদেরচাদের কাছাকাছি নদীটিকে প্রতিদিন দেখতে যেত । পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বর্ষণে যেতে না পারায় নদীটির চেহারা ঔৎসকোর কারণ কেমন হয়েছে তা দেখার জন্য সে উৎসুক হয়েছিল ।
16. ‘ তা হোক ।’— ‘ তা হোক ‘ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? উক্তিটির মধ্যে বক্তার যে মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে , তা নিজের ভাষায় লেখো ।
Answer: আকাশ মেঘাচ্ছন্ন এবং যে – কোনো মুহূর্তে বৃষ্টি নামার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র নদীর প্রতি অমোঘ আকর্ষণের জন্য নদেরচাদকে নদী দেখতে যেতেই ব — এই ভাবনাটি বোঝাতেই ‘ তা হোক ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ।
উক্তিটির মধ্যে দিয়ে নদেরচাঁদের একগুঁয়েমি ও ছেলেমানুষি প্রকাশ পেয়েছে । পাঁচ দিনের একটানা বর্ষণে তার নদী বক্তার প্রকাশিত দর্শনে সাময়িক ছেদ পড়লেও বৃষ্টি থামার সঙ্গে মনোভাব সঙ্গে তার নদী দেখার বাসনা তীব্র আকার ধারণ করে ।
17. ‘ আজও সে সেইখানে গিয়া বসিল । — সে কোথায় গিয়ে বসল ? তার সেখানে বসার কারণ কী ছিল ?
Answer: ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্প অনুসারে নদেরচাঁদ যে – স্টেশনের স্টেশনমাস্টার ছিল , তার এক মাইল দূরে নদীর ওপরে একটি নতুন রং করা ব্রিজ ছিল । সেই ব্রিজের মাঝামাঝি ইট , সুরকি আর সিমেন্ট গাঁথা ধারকস্তঙের কিনারায় বসে সে রোজ নদীকে দেখত । সেদিনও নদেরচাঁদ সেইখানেই গিয়ে বসল । ব্রিজের ধারকস্তম্ভের কিনারায় বসে নদীকে দেখলে নদীবক্ষের ওপর থেকে নদীর বিস্তারসহ সামগ্রিক রূপটাই দর্শকের চোখে ধরা পড়ে । তাই নদেরচাঁদ সেখানে বসত ।
18. গল্পটির নাম ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ হওয়ার পিছনে যুক্তি কী বলে তোমার মনে হয় ?
Answer: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পে প্রকৃতির প্রতিশোধের কাহিনি শুনিয়েছেন । সভ্যতার অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে গিয়ে মানুষ প্রকৃতিকে কাঠগড়ায় তুলেছে । প্রকৃতির স্বাধীনতা খর্ব করে নিজের সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি করতে সে গাছ কেটেছে , নদীতে বাঁধ দিয়ে তার স্বাভাবিক গতি রুদ্ধ করেছে , বাতাসে মিশিয়েছে বিষ । গল্পে নদেরচাঁদ হয়ে উঠেছে মানবসভ্যতার প্রতীক , আর নদী প্রকৃতির প্রতিভূ । তাই ‘ নদীর বিদ্রোহ ’ আসলে হয়ে উঠেছে প্রকৃতির প্রতিবাদের কাহিনি ।
19. ” কিছুক্ষণ নদীকে না দেখিলে সে বাঁচিবে না । কার না বাঁচার কথা বলা হয়েছে ? নদীকে না দেখলে সে বাঁচবে না কেন ?
Answer: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পের মুখ্য চরিত্র যার না – বাচার নদেরচাদ নদীকে না দেখলে বাঁচবে না বলা হয়েছে । নদেরচাঁদ জন্ম থেকেই নদীর পাশে বড়ো হয়েছে । নদী তার জীবনে শ্বাসপ্রশ্বাসের মতোই মূল্যবান । নদীকে ছেড়ে সে কখনও থাকেনি । এমনকি , বরাতজোরে তার কর্মক্ষেত্রে সে নদীকে পাশে পেয়েছে । তাই নদীর প্রতি তার আকর্ষণ যেন পাগলামিতে পরিণত হয়েছে । এই কারণে নদীকে না দেখলে সে বাঁচবে না ।
20. না জানি নদীকে আজ কী অপরূপ রূপ দিয়াছে ? – এই উক্তি থেকে বক্তার কোন মনোভাবের পরিচয় পাও ? কে নদীকে অপরূপ রূপ দিয়েছে ?
Answer: বক্তার মনোভাবের পরিচয় উত্তর আলোচ্য উক্তিটি থেকে ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পের মুখ্যচরিত্র নদেরচাদের নদীর প্রতি মুগ্ধতা ও ভালোবাসা ব্যক্ত হয়েছে । আজন্ম নদীর পাশে মানুষ হওয়া নদেরচাঁদ নদীর প্রতিটি ওঠাপড়া , প্রতিটি পরিবর্তন দেখে আনন্দ পেত । বর্ষার প্রবল জলধারা তার বিশীর্ণা ক্ষীণকায়া নদীকে যে কী অপরুপ রূপ দিয়েছে , তা দেখার জন্য সে পাগলপারা হয়ে উঠেছিল । পাঁচ দিনব্যাপী প্রবল বৃষ্টিপাত নদীকে পরিপুষ্ট করে তাকে অপরূপ রূপ দিয়েছিল ।
21. ‘ রেলের উঁচু বাঁধ ধরিয়া হাঁটিতে হাঁটিতে দু – পাশে চাহিয়া চাহিয়া নদেরচাদ নদীর বর্ষণপুষ্ট মূর্তি কল্পনা করিবার চেষ্টা করিতে লাগিল । – দু – পাশে চেয়ে চেয়ে নদেরচাঁদ কী দেখছিল ? সে নদীর বর্ষণপুষ্ট মূর্তি কেন কল্পনা করার চেষ্টা করছিল ?
Answer: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘ নদীর বিদ্রোহ ’ গল্পে রেলের উঁচু বাঁধের দু – পাশের মাঠঘাট অতিবৃষ্টিতে জলে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল । নদেরচাঁদ তা দেখতে দেখতেই নদেরচাদ যা দেখেছিল । যাচ্ছিল । নদীর বর্ষণপুষ্ট মূর্তি কল্পনার কারণ → নদীর প্রতি নদেরচাদের ছিল অপরিসীম আকর্ষণ । পাঁচদিনের টানা বৃষ্টির জন্য সে নদীকে দেখতে যেতে পারেনি । তাই সে নদীকে দেখার জন্য উন্মত্তপ্রায় হয়ে উঠেছিল । পাঁচদিনের অতিবৃষ্টি তার প্রতিদিনের চেনা ক্ষীণকায়া নদীটিকে কী মূর্তি দান করেছে , সে কথাই সে কল্পনা করছিল ।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | নদীর বিদ্রোহ (গল্প) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় – মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Nodir Bidroho Question and Answer:
1. নদেরচাদের চরিত্রটি আলোচনা করো ।
Answer: নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পটি নদীপ্রেমিক নদেরচাদের তীব্র আবেগ ও আকুলতাকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে । গল্পের নিয়ন্ত্রক বা কেন্দ্রীয় চরিত্র যে সে . এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ।
নদেরচাঁদের চরিত্রের যে – দিকটি সবচেয়ে প্রকট , তা হল নদীর প্রতি তার তীব্র আকর্ষণ । নদীর ধারে বড়ো হয়ে ওঠার দরুন নদীর প্রতি তার টান থাকা স্বাভাবিক । তার গ্রামের ক্ষীণকায়া মীর প্রতি তীব্র নদীটিকে সে ভালোবাসত এক অসুস্থ আত্মীয়ার আকর্ষণ মতোই । এমনকী তার কর্মস্থলের কাছের নদীটিকে প্রতিদিন না – দেখেও সে থাকতে পারত না । নদীর প্রতি তার এই টান যে অস্বাভাবিক , তা বুঝলেও এই পাগলামিটা সে উপভোগ করত । আকোপ্রবণতা অস্থিরতা নদেরচাদের নদীর প্রতি ভালোবাসা , বর্ষায় স্ত্রীর বিরহে কাতর হয়ে ওঠা— এগুলি আবেগপ্রবণতার লক্ষণ । আবার বিরহে কাতর হয়ে স্ত্রীকে লেখা চিঠি খেলার ছলে নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দেয় নদেরচাঁদ । এ থেকে বোঝা যায় , তার মধ্যে কাজ করে চলে এক অস্থিরতা । তাই অবিশ্রান্ত বৃষ্টিতে পাঁচদিন নদীর কাছে যেতে না পেরে ছটফট করে সে । নদীই যেন নিঃসঙ্গ নদেরচাঁদের প্রেয়সীতে রূপান্তরিত হয় ।
সংবেদনশীলতা নদেরচাঁদ নদীর ভাষা বুঝত । নদীর ভয়ংকরী রূপ দেখে সে বুঝতে পেরেছিল , সভ্যতার নামে প্রকৃতিকে পদানত করলে শেষপর্যন্ত তা ধ্বংসই ডেকে আনবে । তার এই উপলব্ধি প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ও সংবেদনশীলতারই পরিচয় । তাই সে যে ব্রিজ নিয়ে গর্ব করেছিল , তার প্রয়োজনীয়তা বিষয়েই সংশয় প্রকাশ করে । নদেরচাঁদ যতই আবেগপ্রবণ হোক , নদীর প্রতি তার যতই টান থাকুক , তা কিন্তু কখনোই তার কর্তব্য পালনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না । স্টেশনমাস্টার হিসেবে সে তার দায়িত্ববোধ দায়িত্ব যথাযথভাবেই পালন করে । এইসব মিলিয়ে নদেরচাঁদ একটি ব্যতিক্রমী চরিত্র হিসেবেই উপস্থাপিত হয়েছে । গল্পের শেষে তার নিয়তি – নির্দিষ্ট মৃত্যু যেন মানুষের নিজের তৈরি যন্ত্রসভ্যতার হাতে অসহায় ও করুণ পরিণতির এক আশ্চর্য ভাষ্য হয়ে ওঠে ।
2. ‘ দুদিন ধরিয়া বাহিরের অবিশ্রান্ত বর্ষণের সঙ্গে সুর মিলাইয়া নদেরচাদ বউকে প্রাণপণে একখানা পাঁচপৃষ্ঠাব্যাপী বিরহ – বেদনাপূর্ণ চিঠি লিখিয়াছে , ‘ ’ –‘অবিশ্রান্ত বর্ষণের সঙ্গে সুর মিলাইয়া ‘ – র অর্থ কী ? চিঠির পরিণতি যা হয়েছিল , তার পিছনের কারণটি ব্যাখ্যা করো ।
Answer: যুগে যুগে বর্ষার আবহের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক স্বীকৃত । এই ব্যাকুলতার আভাস মেলে কালিদাস , রবীন্দ্রনাথ কিংবা বৈষুব ‘ অবিভ্রান্ত বর্ষণের সঙ্গে সুর মিলাইয়া পদকর্তাদের লেখা কাব্যের ছত্রে ছত্রে । মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পের নায়ক নদের চাঁদ দীর্ঘদিন কর্মসূত্রে ঘরছাড়া হওয়ার কারণে স্ত্রী বিচ্ছিন্ন । তাই পাঁচ দিন ধরে একটানা বৃষ্টি তার বিরহব্যথাকে আরও প্রবল করে তুলেছিল । বৃষ্টির সুরের কোমলতা মাখিয়ে সে স্ত্রীকে পাঁচ পৃষ্ঠার একটি চিঠি লিখেছিল । চিঠির পরিণতির পিছনে প্রকৃত কারণ বহু যত্নে ও আবেগে স্ত্রীকে লেখা চিঠি নদেরচাঁদ ছিঁড়ে ছিঁড়ে নদীর ফেনিল জলস্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছিল । এর কারণ এই নয় যে , সে চিঠিটি স্ত্রীর হাতে পৌঁছে দিতে উৎসাহী ছিল না । বরং এর কারণটি ছিল অত্যন্ত শিশুসুলভ । সে ভয়ংকরী নদীর উত্তাল জলরাশির সঙ্গে খেলায় মেতেছিল । খেলার অন্য কোনো সরঞ্জাম না – পেয়ে নদেরচাঁদ পকেট থেকে চিঠিটি বের করে ছিঁড়ে নদীর জলে ভাসাতে থাকে । নদী কীভাবে দ্রুততার সঙ্গে চিঠিগুলি ভাসিয়ে নিয়ে যায় , তাই দেখাই তার উদ্দেশ্য ছিল । এসবের পিছনেই ছিল নদেরচাঁদের নদী সম্পর্কে অস্বাভাবিক পাগলামি । মানুষের কাছে তার প্রিয়জন সবচেয়ে আপন । কিন্তু নদেরচাঁদের আচরণ বুঝিয়ে দেয় যে , তার কাছে নদীর চেয়ে বেশি আপনজন আর কেউ নেই । এখানে নদী আসলে তার প্রেয়সীতে রূপান্তরিত হয় ।
3.‘ নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে । —নদীর বিদ্রোহের কারণ কী ছিল ? ‘ সে ’ কীভাবে তা বুঝতে পেরেছিল ?
Answer: ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পে আমরা দেখি ছোটোবেলা থেকেই নদেরচাদের সমস্ত কিছু নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে । নদীর ভাষা সে বুঝবে এটাই স্বাভাবিক । বর্ষণপুষ্ট উত্তাল নদীকে সে ক্ষিপ্ত ও বিক্ষুব্ধ বলে চিনতে পেরেছিল । মানুষের তৈরি বাঁধ এবং ব্রিজ নদীকে শীর্ণকায় করে তোলায় নদী যে তাতে ক্ষুব্ধ , নদীর বিদ্রোহের , কারণ নদেরচাঁদ তার সংবেদনশীল মন দিয়ে তা উপলব্ধি করেছিল । মানুষের প্রযুক্তির কাছে অবদমিত প্রকৃতি যেন নদীর মাধ্যমে প্রতিশোধ নিতে চাইছে । নদেরচাঁদ বুঝেছিল , প্রকৃতির প্রতি মানুষের অবিচারই মানবসভ্যতাকে একদিন ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে ।
নদেরচাঁদ সংবেদনশীল মানুষ । নদীকে নিয়ে তার কৌতূহল পাগলামির পর্যায়ের হলেও নদীকে নিয়ে তার অন্তর্দৃষ্টি তাকে অনন্যপূর্ব সিদ্ধান্তে উপনীত করে । প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান নদেরচাদ যেভাবে দাম্ভিক মানুষ প্রকৃতিকে বশে আনতে নদীর বুকে ব্রিজ বানিয়েছে , বাঁধ বেঁধেছে । এই অন্যায়ের প্রতিবাদ যেন ধ্বনিত হয় নদীর গর্জনে , সব কিছুকে ভেঙে ফেলার চেষ্টায় । নদীর এই কাজকে যেন সমর্থন করে চলে প্রকৃতির বৃষ্টি , মেঘ ও অন্ধকার । প্রকৃতির এইসব আয়োজনের দিকে লক্ষ রেখে নদীর বিদ্রোহকে নদেরচাঁদ অন্তরাত্মা দিয়ে অনুভব করেছে ।
4. ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পের শেষে নদেরচাদের পরিণতি কীভাবে প্রতীকায়িত হয়েছে , গল্পটি পড়ে তোমার উপলব্ধি থেকে ব্যক্ত করো ।
অথবা , মানুষের প্রয়োজন ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পে কীভাবে উপস্থাপিত হয়েছে লেখো ।
Answer: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ নদীর বিদ্রোহ ’ গল্পটি মনস্তাত্ত্বিক আঙ্গিকে লেখা । গল্পটি আধুনিক মানুষের পরিবেশচেতনার ইঙ্গিতবাহী । মানুষ নগরায়ণের জন্য দ্রুত বন কেটে মরুভূমিতে আহ্বান জানাচ্ছে , বাতাসে মেশাচ্ছে বিব । নদীর বুকে বাঁধ বেঁধে , ব্রিজ গড়ে সে বিদীর্ণ করছে নদীবক্ষ মানুষ বুঝতে পারছে না প্রকৃতি ও পরিবেশকে ধ্বংস করে যে মৃত্যুফাদ সে রচনা করছে সেখান থেকে তার বেরিয়ে আসা মুশকিল ।
যন্ত্রনির্ভর মানবসভ্যতা বনাম প্রকৃতির প্রতিনিধি – মনস্তাত্ত্বিক গল্পটির দুটি প্রতিপক্ষ- একদিকে নদেরচাঁদ , যে যন্ত্রনির্ভর মানবসভ্যতার প্রতিনিধি ; অন্যদিকে নদী , যে কিনা প্রকৃতির প্রতিনিধি । গল্পে নদেরটাদের নদীপ্রীতি আসলে সমানুভূতির নয় সহানুভূতির । নদীর খেপে ওঠার মধ্যে নদেরচাঁদ প্রত্যক্ষ করেছিল বন্দিনি নদীর মুক্তির আকাঙ্ক্ষা । আর এটাই তাকে আতঙ্কিত করে তোলে । তাই সে প্রতিহিংসার হাত থেকে বাঁচতে পালাতে চেয়েছে । কিন্তু মানুষের তৈরি প্রযুক্তির জন্য নদেরচাঁদ এতদিন যে – গর্ব প্রকাশ করে এসেছে , সেই প্রযুক্তিরই ফসল ট্রেনের ঢাকার তার প্রাণ যায় । এ যেন আধুনিক সভ্যতার প্রতি এক সতর্কর্তা- নিজের তৈরি ফাঁদে মানুষ যেভাবে নিজেকে জড়িয়ে ফেলছে , তাতে একদিন তার ধ্বংস অনিবার্য । আসলে গল্পে অসহায় নদেরচাদের মৃত্যু সভ্যতার সর্বনাশা পরিণামকেই চিহ্নিত করেছে । প্রকৃতি ও মানুষের সহাবস্থান , প্রকৃতির স্বাভাবিক সাবলীলতা বজায় রেখে উন্নয়ন এবং পরিবেশ আর প্রকৃতির সঙ্গে মিতালি স্থাপন করেই সভ্যতার সত্যিকারের উন্নতি সম্ভব । তাই বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির যে – রূপে প্রকৃতি তার সামঞ্জস্য ফিরে পাবে ও মানুষ নিজেও অগ্রগতির সুবিধা ভোগ করবে , সেই প্রকৃতি – বান্ধব প্রযুক্তিই হল সভ্যতাকে রক্ষা করার একমাত্র পথ ।
5. নিজের এই পাগলামিতে যেন আনন্দই উপভোগ করে । কার পাগলামির কথা বলা হয়েছে ? গল্প অনুসরণে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির পাগলামির পরিচয় দাও ।
Answer: উদ্ধৃত অংশে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ পাগলামি করা ব্যক্তির পরিচয় গল্পে কেন্দ্রীয় চরিত্র নদেরচাদের নদীর জন্য পাগলামির কথা বলা হয়েছে ।
গ্রামবাংলার এক নদীর ধারে নদেরচাদের জন্ম এবং বড়ো হয়ে ওঠা । তাই ছোটোবেলা থেকেই নদী তার বন্ধু । এমনকি কর্মসূত্রে সে যে জায়গায় আসে সেখানেও একটি নদী রয়েছে । ফলে খুব সহজেই সেই নদীও অল্পদিনের মধ্যেই নদেরচাঁদের আপন হয়ে ওঠে । নদীটিকে একটি দিনের জন্যও না – দেখে সে থাকতে পারে না । গ্রীষ্মকালে শুকনো , শীর্ণ ও ক্ষীণকায়া নদীর জন্য সে বেদনা অনুভব করে । আবার বর্ষার জল পেয়ে নদী ফুলেফেঁপে উঠলে নদেরচাঁদের মনেও যেন খুশির জোয়ার আসে । নদীর কাছে সে উজাড় করে দেয় মনের যত কথা । নদী ও নদেরচাঁদ যেন পরস্পরের সুখ – দুঃখের অংশীদার । নদীকে বাঁধ দিয়ে বাঁধলে কষ্ট হয় নদেরচাঁদের । খেলার ছলে নিজের স্ত্রীকে লেখা চিঠির পাতাগুলো সে অনায়াসে ছুড়ে দিতে পারে নদীর জলের জটিল আবর্তে । নদীর প্রতি তার এই টান যে স্বাভাবিক নয় , তা সে বুঝতে পারে , কিন্তু নিজেকে সংযত করতে পারে না , বরং উপভোগ করে নিজের এই পাগলামিকে ।
6. আজও সে সেইখানে গিয়া বসিল / – কোথায় গিয়ে বসার কথা বলা হয়েছে ? সেখানে বসে নদেরচাঁদ নদীর কোন রূপ দর্শন করেছিল ?
Answer: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ নদীর বিদ্রোহ ’ গল্পের নায়ক নদেরচাঁদ বসার স্থানের সম্পর্কে প্রতিদিন নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজের মাঝামাঝি ইট , সুরকি আর সিমেন্টের গাঁথা ধারকস্তত্ত্বের শেষপ্রান্তে বসে নদীকে প্রত্যক্ষ করত । সেদিনও সে সেখানেই গিয়ে বসেছিল ।
পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির জন্য নদেরচাদের নদীদর্শন সাময়িক স্থাগিত থাকলেও , মনে মনে সে নদীকে দেখার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে উঠেছিল । তাই বৃষ্টি বন্ধ হতেই সে উদ্গ্রীব হয়ে তার নদী দেখার নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে সেখানে বসে নদেরচাদের দর্শন করা নদীর রূপ পৌঁছেছিল । কিন্তু নদী যেন আজ খেপে গিয়েছে । তার গাঢ় পঙ্কিল জল ফুলেফেঁপে উচ্ছ্বসিত হয়ে ছুটে চলেছে । নদেরচাঁদ তার ক্ষীণস্রোত নদীটির কথা ভাবছিল । তাই তার চার বছরের চেনা নদীটি আরও বেশি ভয়ংকর ও অপরিচিত মনে হল । ব্রিজের মাঝামাঝি ধারকস্তম্ভের ওপর বসে সে দেখল নদীর স্রোত সেই ধারকস্তম্ভে বাধা পেয়ে ফেনিল আবর্ত রচনা করে উপরের দিকে উঠে আসছে । দেখে মনে হয় যেন হাত বাড়িয়ে জলকে স্পর্শ করা যাবে । নদেরচাদের ভারী আমোদ হল । নদীর সঙ্গে খেলার লোভে সে পকেট থেকে স্ত্রীকে লেখা চিঠি বের করে ভাসিয়ে দিতে থাকে । কিন্তু পুনরায় মুশলধারে বৃষ্টি নামায় তার এই উল্লাস আতঙ্কে পরিণত হয় ।
7. বড়ো ভয় করিতে লাগিল নদেরচাদের । -নদেরচাদের ভয়ের স্বরূপ আলোচনা করো ।
Answer: ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পে আমরা দেখি , নদীবক্ষে নির্মিত যে – ব্রিজের ধারকস্তম্ভের প্রান্তে বসে নদেরচাদ ভয়ংকরী নদী জলরাশির উন্মাদনা লক্ষ করছিল , তার মাত্র কয়েক হাত নীচেই ছিল বিপুল বিস্ফারিত জলরাশি । এরপর প্রবল বৃষ্টি নামলে নদীর জল ও বৃষ্টিপাতের শব্দ মিলেমিশে যে চাপা গর্জন সৃষ্টি করে , তা নদেরচাদকে আতঙ্কে অবশ করে তোলে ।
নদেরচাঁদ এক অদ্ভূত অবসন্নতা আর বিবশতায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে । তার মন জানত , সেখান থেকে উঠে চলে যাওয়াই যথাযথ সিদ্ধান্ত । কিন্তু তার শরীর যেন কিছুতেই সায় দিচ্ছিল না । তার এই আতঙ্কের উৎস ছিল সংবেদনশীল মন , সে বুঝে গিয়েছিল নদীর এই ভয়াবহতার কারণ হল , মানবসভ্যতার বিরুদ্ধে প্রকৃতির যুদ্ধঘোষণা । মানুষ যুগ যুগ ধরে প্রকৃতিকে বশ মানাতে গিয়ে এভাবেই নিজের বিপদ ডেকে এনেছে । প্রকৃতিপ্রেমিক নদেরচাঁদ নদীর এই বিদ্রোহ অনুভব করেছিল । সে বুঝেছিল , এই ক্ষিপ্ত নদী প্রতিশোধ নিতে বাঁধ ও ব্রিজ ভেঙে নিজের পথ পরিষ্কার করে নেবে । আর সেই বিক্ষুব্ধ নদীর সামনে মানবসভ্যতার একমাত্র প্রতিনিধিরূপে নদেরচাঁদ সন্ত্রস্ত আর আতঙ্কিত বোধ করে ।
8. ‘ একটা বেদনাদায়ক চেতনা কিছুক্ষণের জন্য নদেরচাদকে দিশেহারা করিয়া রাখিল , তারপর সে অতিকষ্টে উঠিয়া দাঁড়াইল।— নদেরচাদ দিশেহারা হয়ে পড়েছিল কেন ? তার উঠে দাঁড়াতে কষ্ট হওয়ার কারণ কী ছিল ?
Answer: পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির পর নদীর রূপ দেখে নদেরচাঁদ প্রথমে আমোদিত হলেও , অল্পক্ষণ পরেই তার মন থেকে ছেলেমানুষি উধাও হয়ে গিয়েছিল । আবার বৃষ্টি শুরু হওয়ায় স্রোতপূর্ণ নদীর শব্দ ও বৃষ্টির আওয়াজ মিলেমিশে এমন একটা শব্দের সৃষ্টি করল , যা শুনে সে আতঙ্কিত ও আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল । সেখান থেকে উঠে যাওয়ার ক্ষমতাটুকুও সে হারিয়ে ফেলল । প্রকৃতির রোষের কাছে মানুষ অসেরচাদের দিশেহারা যে কতটা অসহায় তার একটা ভীতিময় অনুভূতি হয়ে পড়ার কারণ নদেরচাদের চেতনা ও অবচেতন মনের মধ্যেকার ফারাক ঘুচিয়ে দিল । এমন সময় একটা ট্রেন চলে যাওয়ার আকস্মিক শব্দের মতন বেদনাদায়ক আঘাতে তার ঘোর ভাঙে । কিছুক্ষণের জন্য তার ভারাক্রান্ত মন তাকে দিশেহারা করে তোলে ।
→ মানুষ যখন আতঙ্কিত হয় তখন তার মধ্যে দু – ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায় । হয় সে অতিসক্রিয় হয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালায় , নয় সে স্থির ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে । এক্ষেত্রে নদীর গর্জন এবং বৃষ্টির শব্দ তার মনে যে – প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছিল , তাতে সে হতভম্ব আর অবসন্ন হয়ে পড়েছিল । এইজন্য নদেরচাদ ব্রিজের ওপর থেকে উঠে যেতে চাইলেও তার শরীর – মন তাতে সংগত করতে পারেনি । কিন্তু ট্রেন চলে যাওয়ার মতো কোনো একটি প্রচণ্ড শব্দে যখন তার সংবিৎ ফিরল , তখন সে অতিকষ্টে উঠে দাঁড়াল ।
Answer: নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পটি নদীপ্রেমিক নদেরচাদের তীব্র আবেগ ও আকুলতাকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে । গল্পের নিয়ন্ত্রক বা কেন্দ্রীয় চরিত্র যে সে . এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ।
নদেরচাঁদের চরিত্রের যে – দিকটি সবচেয়ে প্রকট , তা হল নদীর প্রতি তার তীব্র আকর্ষণ । নদীর ধারে বড়ো হয়ে ওঠার দরুন নদীর প্রতি তার টান থাকা স্বাভাবিক । তার গ্রামের ক্ষীণকায়া মীর প্রতি তীব্র নদীটিকে সে ভালোবাসত এক অসুস্থ আত্মীয়ার আকর্ষণ মতোই । এমনকী তার কর্মস্থলের কাছের নদীটিকে প্রতিদিন না – দেখেও সে থাকতে পারত না । নদীর প্রতি তার এই টান যে অস্বাভাবিক , তা বুঝলেও এই পাগলামিটা সে উপভোগ করত । আকোপ্রবণতা অস্থিরতা নদেরচাদের নদীর প্রতি ভালোবাসা , বর্ষায় স্ত্রীর বিরহে কাতর হয়ে ওঠা— এগুলি আবেগপ্রবণতার লক্ষণ । আবার বিরহে কাতর হয়ে স্ত্রীকে লেখা চিঠি খেলার ছলে নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দেয় নদেরচাঁদ । এ থেকে বোঝা যায় , তার মধ্যে কাজ করে চলে এক অস্থিরতা । তাই অবিশ্রান্ত বৃষ্টিতে পাঁচদিন নদীর কাছে যেতে না পেরে ছটফট করে সে । নদীই যেন নিঃসঙ্গ নদেরচাঁদের প্রেয়সীতে রূপান্তরিত হয় ।
সংবেদনশীলতা নদেরচাঁদ নদীর ভাষা বুঝত । নদীর ভয়ংকরী রূপ দেখে সে বুঝতে পেরেছিল , সভ্যতার নামে প্রকৃতিকে পদানত করলে শেষপর্যন্ত তা ধ্বংসই ডেকে আনবে । তার এই উপলব্ধি প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ও সংবেদনশীলতারই পরিচয় । তাই সে যে ব্রিজ নিয়ে গর্ব করেছিল , তার প্রয়োজনীয়তা বিষয়েই সংশয় প্রকাশ করে । নদেরচাঁদ যতই আবেগপ্রবণ হোক , নদীর প্রতি তার যতই টান থাকুক , তা কিন্তু কখনোই তার কর্তব্য পালনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না । স্টেশনমাস্টার হিসেবে সে তার দায়িত্ববোধ দায়িত্ব যথাযথভাবেই পালন করে । এইসব মিলিয়ে নদেরচাঁদ একটি ব্যতিক্রমী চরিত্র হিসেবেই উপস্থাপিত হয়েছে । গল্পের শেষে তার নিয়তি – নির্দিষ্ট মৃত্যু যেন মানুষের নিজের তৈরি যন্ত্রসভ্যতার হাতে অসহায় ও করুণ পরিণতির এক আশ্চর্য ভাষ্য হয়ে ওঠে ।
2. ‘ দুদিন ধরিয়া বাহিরের অবিশ্রান্ত বর্ষণের সঙ্গে সুর মিলাইয়া নদেরচাদ বউকে প্রাণপণে একখানা পাঁচপৃষ্ঠাব্যাপী বিরহ – বেদনাপূর্ণ চিঠি লিখিয়াছে , ‘ ’ –‘অবিশ্রান্ত বর্ষণের সঙ্গে সুর মিলাইয়া ‘ – র অর্থ কী ? চিঠির পরিণতি যা হয়েছিল , তার পিছনের কারণটি ব্যাখ্যা করো ।
Answer: যুগে যুগে বর্ষার আবহের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক স্বীকৃত । এই ব্যাকুলতার আভাস মেলে কালিদাস , রবীন্দ্রনাথ কিংবা বৈষুব ‘ অবিভ্রান্ত বর্ষণের সঙ্গে সুর মিলাইয়া পদকর্তাদের লেখা কাব্যের ছত্রে ছত্রে । মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পের নায়ক নদের চাঁদ দীর্ঘদিন কর্মসূত্রে ঘরছাড়া হওয়ার কারণে স্ত্রী বিচ্ছিন্ন । তাই পাঁচ দিন ধরে একটানা বৃষ্টি তার বিরহব্যথাকে আরও প্রবল করে তুলেছিল । বৃষ্টির সুরের কোমলতা মাখিয়ে সে স্ত্রীকে পাঁচ পৃষ্ঠার একটি চিঠি লিখেছিল । চিঠির পরিণতির পিছনে প্রকৃত কারণ বহু যত্নে ও আবেগে স্ত্রীকে লেখা চিঠি নদেরচাঁদ ছিঁড়ে ছিঁড়ে নদীর ফেনিল জলস্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছিল । এর কারণ এই নয় যে , সে চিঠিটি স্ত্রীর হাতে পৌঁছে দিতে উৎসাহী ছিল না । বরং এর কারণটি ছিল অত্যন্ত শিশুসুলভ । সে ভয়ংকরী নদীর উত্তাল জলরাশির সঙ্গে খেলায় মেতেছিল । খেলার অন্য কোনো সরঞ্জাম না – পেয়ে নদেরচাঁদ পকেট থেকে চিঠিটি বের করে ছিঁড়ে নদীর জলে ভাসাতে থাকে । নদী কীভাবে দ্রুততার সঙ্গে চিঠিগুলি ভাসিয়ে নিয়ে যায় , তাই দেখাই তার উদ্দেশ্য ছিল । এসবের পিছনেই ছিল নদেরচাঁদের নদী সম্পর্কে অস্বাভাবিক পাগলামি । মানুষের কাছে তার প্রিয়জন সবচেয়ে আপন । কিন্তু নদেরচাঁদের আচরণ বুঝিয়ে দেয় যে , তার কাছে নদীর চেয়ে বেশি আপনজন আর কেউ নেই । এখানে নদী আসলে তার প্রেয়সীতে রূপান্তরিত হয় ।
3.‘ নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে । —নদীর বিদ্রোহের কারণ কী ছিল ? ‘ সে ’ কীভাবে তা বুঝতে পেরেছিল ?
Answer: ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পে আমরা দেখি ছোটোবেলা থেকেই নদেরচাদের সমস্ত কিছু নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে । নদীর ভাষা সে বুঝবে এটাই স্বাভাবিক । বর্ষণপুষ্ট উত্তাল নদীকে সে ক্ষিপ্ত ও বিক্ষুব্ধ বলে চিনতে পেরেছিল । মানুষের তৈরি বাঁধ এবং ব্রিজ নদীকে শীর্ণকায় করে তোলায় নদী যে তাতে ক্ষুব্ধ , নদীর বিদ্রোহের , কারণ নদেরচাঁদ তার সংবেদনশীল মন দিয়ে তা উপলব্ধি করেছিল । মানুষের প্রযুক্তির কাছে অবদমিত প্রকৃতি যেন নদীর মাধ্যমে প্রতিশোধ নিতে চাইছে । নদেরচাঁদ বুঝেছিল , প্রকৃতির প্রতি মানুষের অবিচারই মানবসভ্যতাকে একদিন ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে ।
নদেরচাঁদ সংবেদনশীল মানুষ । নদীকে নিয়ে তার কৌতূহল পাগলামির পর্যায়ের হলেও নদীকে নিয়ে তার অন্তর্দৃষ্টি তাকে অনন্যপূর্ব সিদ্ধান্তে উপনীত করে । প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান নদেরচাদ যেভাবে দাম্ভিক মানুষ প্রকৃতিকে বশে আনতে নদীর বুকে ব্রিজ বানিয়েছে , বাঁধ বেঁধেছে । এই অন্যায়ের প্রতিবাদ যেন ধ্বনিত হয় নদীর গর্জনে , সব কিছুকে ভেঙে ফেলার চেষ্টায় । নদীর এই কাজকে যেন সমর্থন করে চলে প্রকৃতির বৃষ্টি , মেঘ ও অন্ধকার । প্রকৃতির এইসব আয়োজনের দিকে লক্ষ রেখে নদীর বিদ্রোহকে নদেরচাঁদ অন্তরাত্মা দিয়ে অনুভব করেছে ।
4. ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পের শেষে নদেরচাদের পরিণতি কীভাবে প্রতীকায়িত হয়েছে , গল্পটি পড়ে তোমার উপলব্ধি থেকে ব্যক্ত করো ।
অথবা , মানুষের প্রয়োজন ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পে কীভাবে উপস্থাপিত হয়েছে লেখো ।
Answer: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ নদীর বিদ্রোহ ’ গল্পটি মনস্তাত্ত্বিক আঙ্গিকে লেখা । গল্পটি আধুনিক মানুষের পরিবেশচেতনার ইঙ্গিতবাহী । মানুষ নগরায়ণের জন্য দ্রুত বন কেটে মরুভূমিতে আহ্বান জানাচ্ছে , বাতাসে মেশাচ্ছে বিব । নদীর বুকে বাঁধ বেঁধে , ব্রিজ গড়ে সে বিদীর্ণ করছে নদীবক্ষ মানুষ বুঝতে পারছে না প্রকৃতি ও পরিবেশকে ধ্বংস করে যে মৃত্যুফাদ সে রচনা করছে সেখান থেকে তার বেরিয়ে আসা মুশকিল ।
যন্ত্রনির্ভর মানবসভ্যতা বনাম প্রকৃতির প্রতিনিধি – মনস্তাত্ত্বিক গল্পটির দুটি প্রতিপক্ষ- একদিকে নদেরচাঁদ , যে যন্ত্রনির্ভর মানবসভ্যতার প্রতিনিধি ; অন্যদিকে নদী , যে কিনা প্রকৃতির প্রতিনিধি । গল্পে নদেরটাদের নদীপ্রীতি আসলে সমানুভূতির নয় সহানুভূতির । নদীর খেপে ওঠার মধ্যে নদেরচাঁদ প্রত্যক্ষ করেছিল বন্দিনি নদীর মুক্তির আকাঙ্ক্ষা । আর এটাই তাকে আতঙ্কিত করে তোলে । তাই সে প্রতিহিংসার হাত থেকে বাঁচতে পালাতে চেয়েছে । কিন্তু মানুষের তৈরি প্রযুক্তির জন্য নদেরচাঁদ এতদিন যে – গর্ব প্রকাশ করে এসেছে , সেই প্রযুক্তিরই ফসল ট্রেনের ঢাকার তার প্রাণ যায় । এ যেন আধুনিক সভ্যতার প্রতি এক সতর্কর্তা- নিজের তৈরি ফাঁদে মানুষ যেভাবে নিজেকে জড়িয়ে ফেলছে , তাতে একদিন তার ধ্বংস অনিবার্য । আসলে গল্পে অসহায় নদেরচাদের মৃত্যু সভ্যতার সর্বনাশা পরিণামকেই চিহ্নিত করেছে । প্রকৃতি ও মানুষের সহাবস্থান , প্রকৃতির স্বাভাবিক সাবলীলতা বজায় রেখে উন্নয়ন এবং পরিবেশ আর প্রকৃতির সঙ্গে মিতালি স্থাপন করেই সভ্যতার সত্যিকারের উন্নতি সম্ভব । তাই বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির যে – রূপে প্রকৃতি তার সামঞ্জস্য ফিরে পাবে ও মানুষ নিজেও অগ্রগতির সুবিধা ভোগ করবে , সেই প্রকৃতি – বান্ধব প্রযুক্তিই হল সভ্যতাকে রক্ষা করার একমাত্র পথ ।
5. নিজের এই পাগলামিতে যেন আনন্দই উপভোগ করে । কার পাগলামির কথা বলা হয়েছে ? গল্প অনুসরণে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির পাগলামির পরিচয় দাও ।
Answer: উদ্ধৃত অংশে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ পাগলামি করা ব্যক্তির পরিচয় গল্পে কেন্দ্রীয় চরিত্র নদেরচাদের নদীর জন্য পাগলামির কথা বলা হয়েছে ।
গ্রামবাংলার এক নদীর ধারে নদেরচাদের জন্ম এবং বড়ো হয়ে ওঠা । তাই ছোটোবেলা থেকেই নদী তার বন্ধু । এমনকি কর্মসূত্রে সে যে জায়গায় আসে সেখানেও একটি নদী রয়েছে । ফলে খুব সহজেই সেই নদীও অল্পদিনের মধ্যেই নদেরচাঁদের আপন হয়ে ওঠে । নদীটিকে একটি দিনের জন্যও না – দেখে সে থাকতে পারে না । গ্রীষ্মকালে শুকনো , শীর্ণ ও ক্ষীণকায়া নদীর জন্য সে বেদনা অনুভব করে । আবার বর্ষার জল পেয়ে নদী ফুলেফেঁপে উঠলে নদেরচাঁদের মনেও যেন খুশির জোয়ার আসে । নদীর কাছে সে উজাড় করে দেয় মনের যত কথা । নদী ও নদেরচাঁদ যেন পরস্পরের সুখ – দুঃখের অংশীদার । নদীকে বাঁধ দিয়ে বাঁধলে কষ্ট হয় নদেরচাঁদের । খেলার ছলে নিজের স্ত্রীকে লেখা চিঠির পাতাগুলো সে অনায়াসে ছুড়ে দিতে পারে নদীর জলের জটিল আবর্তে । নদীর প্রতি তার এই টান যে স্বাভাবিক নয় , তা সে বুঝতে পারে , কিন্তু নিজেকে সংযত করতে পারে না , বরং উপভোগ করে নিজের এই পাগলামিকে ।
6. আজও সে সেইখানে গিয়া বসিল / – কোথায় গিয়ে বসার কথা বলা হয়েছে ? সেখানে বসে নদেরচাঁদ নদীর কোন রূপ দর্শন করেছিল ?
Answer: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ নদীর বিদ্রোহ ’ গল্পের নায়ক নদেরচাঁদ বসার স্থানের সম্পর্কে প্রতিদিন নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজের মাঝামাঝি ইট , সুরকি আর সিমেন্টের গাঁথা ধারকস্তত্ত্বের শেষপ্রান্তে বসে নদীকে প্রত্যক্ষ করত । সেদিনও সে সেখানেই গিয়ে বসেছিল ।
পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির জন্য নদেরচাদের নদীদর্শন সাময়িক স্থাগিত থাকলেও , মনে মনে সে নদীকে দেখার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে উঠেছিল । তাই বৃষ্টি বন্ধ হতেই সে উদ্গ্রীব হয়ে তার নদী দেখার নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে সেখানে বসে নদেরচাদের দর্শন করা নদীর রূপ পৌঁছেছিল । কিন্তু নদী যেন আজ খেপে গিয়েছে । তার গাঢ় পঙ্কিল জল ফুলেফেঁপে উচ্ছ্বসিত হয়ে ছুটে চলেছে । নদেরচাঁদ তার ক্ষীণস্রোত নদীটির কথা ভাবছিল । তাই তার চার বছরের চেনা নদীটি আরও বেশি ভয়ংকর ও অপরিচিত মনে হল । ব্রিজের মাঝামাঝি ধারকস্তম্ভের ওপর বসে সে দেখল নদীর স্রোত সেই ধারকস্তম্ভে বাধা পেয়ে ফেনিল আবর্ত রচনা করে উপরের দিকে উঠে আসছে । দেখে মনে হয় যেন হাত বাড়িয়ে জলকে স্পর্শ করা যাবে । নদেরচাদের ভারী আমোদ হল । নদীর সঙ্গে খেলার লোভে সে পকেট থেকে স্ত্রীকে লেখা চিঠি বের করে ভাসিয়ে দিতে থাকে । কিন্তু পুনরায় মুশলধারে বৃষ্টি নামায় তার এই উল্লাস আতঙ্কে পরিণত হয় ।
7. বড়ো ভয় করিতে লাগিল নদেরচাদের । -নদেরচাদের ভয়ের স্বরূপ আলোচনা করো ।
Answer: ‘ নদীর বিদ্রোহ ‘ গল্পে আমরা দেখি , নদীবক্ষে নির্মিত যে – ব্রিজের ধারকস্তম্ভের প্রান্তে বসে নদেরচাদ ভয়ংকরী নদী জলরাশির উন্মাদনা লক্ষ করছিল , তার মাত্র কয়েক হাত নীচেই ছিল বিপুল বিস্ফারিত জলরাশি । এরপর প্রবল বৃষ্টি নামলে নদীর জল ও বৃষ্টিপাতের শব্দ মিলেমিশে যে চাপা গর্জন সৃষ্টি করে , তা নদেরচাদকে আতঙ্কে অবশ করে তোলে ।
নদেরচাঁদ এক অদ্ভূত অবসন্নতা আর বিবশতায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে । তার মন জানত , সেখান থেকে উঠে চলে যাওয়াই যথাযথ সিদ্ধান্ত । কিন্তু তার শরীর যেন কিছুতেই সায় দিচ্ছিল না । তার এই আতঙ্কের উৎস ছিল সংবেদনশীল মন , সে বুঝে গিয়েছিল নদীর এই ভয়াবহতার কারণ হল , মানবসভ্যতার বিরুদ্ধে প্রকৃতির যুদ্ধঘোষণা । মানুষ যুগ যুগ ধরে প্রকৃতিকে বশ মানাতে গিয়ে এভাবেই নিজের বিপদ ডেকে এনেছে । প্রকৃতিপ্রেমিক নদেরচাঁদ নদীর এই বিদ্রোহ অনুভব করেছিল । সে বুঝেছিল , এই ক্ষিপ্ত নদী প্রতিশোধ নিতে বাঁধ ও ব্রিজ ভেঙে নিজের পথ পরিষ্কার করে নেবে । আর সেই বিক্ষুব্ধ নদীর সামনে মানবসভ্যতার একমাত্র প্রতিনিধিরূপে নদেরচাঁদ সন্ত্রস্ত আর আতঙ্কিত বোধ করে ।
8. ‘ একটা বেদনাদায়ক চেতনা কিছুক্ষণের জন্য নদেরচাদকে দিশেহারা করিয়া রাখিল , তারপর সে অতিকষ্টে উঠিয়া দাঁড়াইল।— নদেরচাদ দিশেহারা হয়ে পড়েছিল কেন ? তার উঠে দাঁড়াতে কষ্ট হওয়ার কারণ কী ছিল ?
Answer: পাঁচ দিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির পর নদীর রূপ দেখে নদেরচাঁদ প্রথমে আমোদিত হলেও , অল্পক্ষণ পরেই তার মন থেকে ছেলেমানুষি উধাও হয়ে গিয়েছিল । আবার বৃষ্টি শুরু হওয়ায় স্রোতপূর্ণ নদীর শব্দ ও বৃষ্টির আওয়াজ মিলেমিশে এমন একটা শব্দের সৃষ্টি করল , যা শুনে সে আতঙ্কিত ও আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল । সেখান থেকে উঠে যাওয়ার ক্ষমতাটুকুও সে হারিয়ে ফেলল । প্রকৃতির রোষের কাছে মানুষ অসেরচাদের দিশেহারা যে কতটা অসহায় তার একটা ভীতিময় অনুভূতি হয়ে পড়ার কারণ নদেরচাদের চেতনা ও অবচেতন মনের মধ্যেকার ফারাক ঘুচিয়ে দিল । এমন সময় একটা ট্রেন চলে যাওয়ার আকস্মিক শব্দের মতন বেদনাদায়ক আঘাতে তার ঘোর ভাঙে । কিছুক্ষণের জন্য তার ভারাক্রান্ত মন তাকে দিশেহারা করে তোলে ।
→ মানুষ যখন আতঙ্কিত হয় তখন তার মধ্যে দু – ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায় । হয় সে অতিসক্রিয় হয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালায় , নয় সে স্থির ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে । এক্ষেত্রে নদীর গর্জন এবং বৃষ্টির শব্দ তার মনে যে – প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছিল , তাতে সে হতভম্ব আর অবসন্ন হয়ে পড়েছিল । এইজন্য নদেরচাদ ব্রিজের ওপর থেকে উঠে যেতে চাইলেও তার শরীর – মন তাতে সংগত করতে পারেনি । কিন্তু ট্রেন চলে যাওয়ার মতো কোনো একটি প্রচণ্ড শব্দে যখন তার সংবিৎ ফিরল , তখন সে অতিকষ্টে উঠে দাঁড়াল ।
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই ” নদীর বিদ্রোহ (গল্প) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় – মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Nodir Bidroho Question and Answer ” পােস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই Linktaka.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকো যেকোনো প্ৰশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলাে করো এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তোলো , ধন্যবাদ।
মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন – নদীর বিদ্রোহ (গল্প) মানিক বন্দোপধ্যায় – সাজেশন | Madhyamik Bengali Suggestion PDF Download:
মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর – নদীর বিদ্রোহ (গল্প) মানিক বন্দোপধ্যায় | মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর – নদীর বিদ্রোহ (গল্প) মানিক বন্দোপধ্যায় | পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর – নদীর বিদ্রোহ (গল্প) মানিক বন্দোপধ্যায় | মাধ্যমিক বাংলা সহায়ক – নদীর বিদ্রোহ (গল্প) মানিক বন্দোপধ্যায় – প্রশ্ন ও উত্তর । Madhyamik Bengali Nodir Bidroho Question and Answer, Suggestion | Madhyamik Bengali Nodir Bidroho Question and Answer Suggestion | Madhyamik Bengali Nodir Bidroho Question and Answer Notes | West Bengal Madhyamik Class 10th Bengali Question and Answer Suggestion.Madhyamik Bengali Nodir Bidroho Question and Answer, Suggestion Download PDF: West Bengal Board of Secondary Education (WBBSE) Class 10 Ten X Bengali Suggestion is provided here. Madhyamik Bengali Nodir Bidroho Question and Answer Suggestion Questions Answers PDF Download Link in Free has been given below.