মাধ্যমিক Madhyamik Rachana Suggestion 2025: মাধ্যমিক প্রবন্ধ রচনা সাজেশন 2025

  • You MUST read the Linktaka Rules before making your first post otherwise you may get permanent warning points or a permanent Ban.

    Our resources on Linktaka Forum are AUTHENTIC and SAFE. This Website also help students for all types of Competitive Exams and studies. Our mission is all the subject information reach to students through Internet. All resources are double checked by our experts. We hope you enjoy our service as much as we enjoy offering them to you "Enjoy your presence on Linktaka".

নমস্কার প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, তোমরা যারা ২০২৫ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে তাদের জন্য কয়েকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা সাজেশন হিসাবে আজকের পোস্টে তোমাদেরকে শেয়ার করে দেওয়া হল। যে প্রবন্ধ রচনাগুলি তোমরা যদি পড়ে যাও তাহলে তোমরা মাধ্যমিক পরীক্ষাতে 100 শতাংশ কমন পাওয়ার পাশাপাশি, যেকোনো প্রবন্ধ রচনা লিখে আসতে পারবে।

বিশ্ব উষ্ণায়ন ও প্রতিকার /গ্লোবাল ওয়ার্মিং ও ছাত্র সমাজের ভূমিকা

"কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর?
মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক মানুষেতে সুরাসুর!"

ভূমিকা :—

এই কবিতার পঙ্ক্তিগুলো যেন আজকের মানবসমাজের করুণ পরিণতির পূর্বাভাস। সভ্যতার উন্নতির নামে আমরা প্রকৃতির যে নিদারুণ ক্ষতি করেছি, তার ফলশ্রুতিতে সৃষ্টি হয়েছে এক ভয়ঙ্কর অভিশাপ—”Global Warming” বাংলাতে বিশ্ব উষ্ণায়ন। শিল্পায়ন, নগরায়ন, এবং অরণ্য নিধনের মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলেছি। এর ফলে ক্রমাগত বাড়ছে পৃথিবীর উষ্ণতা, যা আমাদের ভবিষ্যতকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছে।

বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ :—

আমরা সকলেই অনুভব করছি যে, পৃথিবী আগের চেয়ে অনেক বেশি গরম হয়ে উঠছে। গ্রীষ্মকাল আরো দীর্ঘ এবং তীব্র হচ্ছে, বর্ষার পরিমাণ ও সময়কাল পরিবর্তিত হচ্ছে, এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘন ঘন ঘটনা ঘটছে। এই সব কিছুর মূল কারণ হল বিশ্ব উষ্ণায়ন। বিশ্ব উষ্ণায়ন হল পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি। এই বৃদ্ধির ফলে আমাদের গ্রহের জলবায়ু ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে।
❝দিনের দিন বাড়ছে গরম, মেরুর বরফ গলে।
সুন্দর প্রকৃতি হচ্ছে নষ্ট, জলবায়ু যাচ্ছে বদলে।❞

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রধান কারণ হল বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি ও বন ধ্বংস।

গ্রিনহাউস গ্যাস:- আমরা যখন জীবাশ্ম জ্বালানি কয়লা, তেল, গ্যাসের ব্যবহার করি, বন উজ্জ্বলন হয়, গাড়ি চালাই, কারখানা চালাই, তখন বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি গ্যাস নির্গত হয়। এই গ্যাসগুলিকে গ্রিনহাউস গ্যাস বলে। এই গ্যাসগুলি সূর্যের আলোকে পৃথিবীতে আসতে দেয় কিন্তু আবার ফিরে যাওয়া আটকে দেয়, ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে থাকে (Greenhouse Effect)।

বন ধ্বংস:- বন গাছ কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ছাড়ে। বন ধ্বংসের ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়ে এবং বিশ্ব উষ্ণায়ন ত্বরান্বিত হয়।

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব :—

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে পৃথিবীতে ইতিমধ্যেই নানা পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। এর প্রধান প্রভাবগুলো হল:
  1. প্রাকৃতিক বিপর্যয়: হিমবাহ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে, যার ফলে উপকূলবর্তী অঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি বাড়ছে।​
  2. খরা ও অনাবৃষ্টি: কৃষিক্ষেত্রে জলাভাব দেখা দিচ্ছে, যার ফলে খাদ্য উৎপাদনে সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে।​
  3. জীববৈচিত্র্যের হ্রাস: বহু প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।​
  4. স্বাস্থ্য সমস্যার বৃদ্ধি: বাড়তি উষ্ণতার ফলে বিভিন্ন রোগব্যাধি যেমন—ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, এবং তাপঘাতের (Heat Stroke) মতো সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।​
  5. আবহাওয়ার অস্বাভাবিক পরিবর্তন: ‘এল নিনো’ এবং ‘লা নিনার’ মতো আবহাওয়ার জটিল প্রক্রিয়াগুলো ক্রমেই প্রকট হচ্ছে।​

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রতিরোধ ব্যবস্থা:—

বিশ্ব উষ্ণায়নের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ এবং দায়িত্বশীল আচরণই একমাত্র উপায়। প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়—বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি।

প্রথমত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার:
বিশ্ব উষ্ণায়নের মূল কারণগুলির মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। এর পরিবর্তে নবায়নযোগ্য শক্তি যেমন—সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, এবং জলবিদ্যুৎ ব্যবহার বাড়াতে হবে।

তাছাড়া, কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং জৈব সারের প্রচলন বাড়াতে হবে। শিল্পক্ষেত্রে CFCs (Chlorofluorocarbons) বা ক্লোরো-ফ্লোরো-কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। পেট্রোলিয়াম এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় রোধ করে পরিবেশ বান্ধব উপায়ে তাদের ব্যবহার করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, বৃক্ষরোপণ ও বনসৃজন:
বনাঞ্চল নিধনের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই নির্বিচারে বৃক্ষনিধন বন্ধ করে বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন বনসৃজন প্রকল্প চালু করতে হবে, কারণ বৃক্ষগুলি প্রাকৃতিকভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। এই উদ্যোগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর পৃথিবী উপহার দিতে সাহায্য করবে।

তৃতীয়ত, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি:
আমাদের প্রত্যেককেই পরিবেশ সংরক্ষণের দায়িত্ব নিতে হবে। “The Earth is what we all have in common.”—উইন্ডেল বেরি (Wendell Berry)-এর এই উক্তি আমাদের শিখায় যে পৃথিবী সবার জন্য, তাই এটি রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।

সর্বোপরি, আন্তর্জাতিক উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি। বিভিন্ন দেশের সরকার এবং রাষ্ট্রপুঞ্জকে (United Nations) জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। যেমন—১৯৭৯ সালের জেনেভা সম্মেলন বা ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির মতো উদ্যোগগুলোকে বাস্তবায়ন ও উন্নত করতে হবে।

উপসংহার :—

বিশ্ব উষ্ণায়নের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং কাজের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতেই হবে। “We do not inherit the earth from our ancestors; we borrow it from our children.”—এই নীতিতে বিশ্বাস করে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ছোট ছোট পরিবর্তন আনার মাধ্যমে আমরা বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারি।

মানুষের উদ্যোগ, প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতা, আর সচেতনতার আলোয় আমরা পৃথিবীকে আবার সবুজে-নীলে সেজে তুলতে পারি।

"যে পৃথিবী হাসে সবুজে,
সেই পৃথিবীই থাকবে বাঁচিয়ে।"


বাংলার উৎসব

"ছক বাঁধা এই জীবন মাঝে মাঝে মুক্তি পেতে চায়,
উৎসবের আনন্দ সুধাপানে জীবনের দুঃখ ভুলে যায়"

ভূমিকা :–

কবি ঈশ্বর গুপ্ত রসিকতা করে বলেছেন, – “এত ভঙ্গ বঙ্গদেশে, তবু রঙ্গে ভরা ”

বঙ্গদেশে বারো মাসে তেরো পার্বন। বাঙালির দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমির মাঝে নুতনের বার্তা নিয়ে আসে উৎসবের কলধ্বনি। উৎসবের মধ্যে দিয়ে বাঙালির ধর্ম, সমাজ, সংস্কৃতি প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায়।


[B]উৎসবের প্রকারভেদ :–[/B]

উৎসবকে প্রধানত চারভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যথা– (ক) রাষ্ট্রীয় উৎসব (খ) ধর্মীয় উৎসব (গ) সামাজিক উৎসব (ঘ) ঋতু উৎসব। রাষ্ট্রীয় উৎসব সমগ্র দেশ জুড়ে পালন হয়। অপরদিকে ধর্মীয় উৎসব নির্দিষ্ট ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ, আবার সামাজিক উৎসব এক অর্থে পারিবারিক উৎসব বলা যেতে পারে। এইরকম বিভিন্ন উৎসব আছে।

রাষ্ট্রীয় উৎসব :–

২৬ শে জানুয়ারি প্রতাপ্তন্ত্র দিবস, ১৫ই আগষ্ট স্বাধীনতা দিবস, ২৫শে বৈশাখ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন, ২রা অক্টোবর গান্ধীজির জন্মদিন, ২৩ জানুয়ারি নেতাজীর জন্মদিন, ১২ জানুয়ারি বিবেকানন্দের জন্মদিন প্রভৃতি জাতীয় উৎসবের অন্তর্গত। ঐসব উৎসব দেশবাসী সাহিত্য, সংগীত ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে পালন করেন।

ধর্মীয় উৎসব :–

ধর্মপ্রাণ বাঙালি জীবনযাপনের প্রতিটি পদক্ষেপে ধর্মীয় অনুশাসন, আচার-অনুষ্ঠান মেনে চলে। তাই বাঙালির জীবনে ধর্মীয় কেন্দ্রিক অনেক উৎসবও রয়েছে। বাঙালির হিন্দু সমাজে বিশেষ কিছু আনন্দমুখর উৎসব রয়েছে যেমন– দুর্গাপুজো, সরস্বতীপুজো, কালীপুজো এছাড়াও রয়েছে রথযাত্রা, দোলযাত্রা, ঝুলনযাত্রা, রাস পূর্ণিমা, রাখি পূর্ণিমা, চড়ক-গাজন প্রভৃতি।

এর সঙ্গে রয়েছে বাঙালি মুসলমানদেরও নানা ধর্মীয় উৎসব, যেমন- ইদলফেতর, ইদুজ্জোহা, মহরম, সবেবরাত প্রভৃতি। খ্রিস্টানরা পালন করেন বড়োদিন, গুড ফ্রাইডে, ইস্টার স্যাটারডে। এ ছাড়াও রয়েছে নানকজয়ন্তী, বুদ্ধজয়ন্তী, পরেশনাথের উৎসব। এইসব ধর্মীয় উৎসবে দিনগুলিতে বাঙালিরা প্রচুর আনন্দ উপভোগ করে।


সামাজিক উৎসব :–

বাঙালি শুধু ধর্মীয় আবেগপ্রবণ জাতিই নয়, বাঙালির ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে মিলিয়ে রয়েছে বিভিন্ন পারিবারিক এবং সামাজিক অনুষ্ঠান। যেমন– অন্নপ্রাশন, বিবাহ, জামাইষষ্ঠী, ভাতৃদ্বিতীয়া, গৃহ প্রবেশ এবং ব্রাহ্মর সমাজে রয়েছে উপনয়ন। বাঙালির দৈনন্দিন জীবনে এই সমস্ত উৎসব গুলি অতপ্রোতভাবে জড়িত। এই উৎসব গুলিতে সমগ্র বাঙালি সমাজ যুক্ত না হলেও বহু মানুষই এই উৎসবে আনন্দে মেতে ওঠে।

ঋতু উৎসব :–
বাঙালির উৎসবের একটি অন্যতম দিক হলো ঋতু উৎসব। বাঙালি তার ধর্মীয় উৎসব এবং সামাজিক উৎসব বাদেও বিভিন্ন ঋতুকে ঘিরে উৎসবে মেতে উঠে। যেমন– পৌষ মাসে রয়েছে পৌষমেলা, পিঠে পার্বণ, তারপর রয়েছে অঘ্রানে নবান্ন, বছরের শুরুতে নববর্ষ প্রভৃতি উৎসবকে কেন্দ্র করে দুঃখ এবং দারিদ্রতার মাঝেও বাঙালি নতুন করে আনন্দে জেগে ওঠে।

উৎসবের ও মিলন :–
উৎসবের প্রধান উদ্দেশ্য ব্যাক্তিগত দুঃখ কষ্ট ভুলে সবার সাথে আনন্দে মেতে ওঠা। উৎসব বা অনুষ্ঠান আমাদেরকে বাধাহীন মেলামেশার সুযোগ করে দেয়। উৎসবের ময়দানে বাঙালির মধ্যে ভেদাভেদের কোনো প্রাচীর থাকেনা। পারস্পরিক আনন্দ, প্রীতি ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্য দিয়েই রচিত হয় সুন্দর সুন্দর বন্ধুত্ব। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের এই আনন্দে মেতে ওঠা বাঙালির উৎসব পালনকে করে তোলে সার্থক।


উপসংহার :–
প্রতিদিনের গতানুগতিক জীবন থেকে মুক্তি পেতে কে না চায়, সকলেই চায় বৈচিত্রের স্বাদ। সকলেই চায় নিজের গণ্ডিবদ্ধ জীবনকে বৃহত্তর ক্ষেত্রে মুক্তি দিয়ে অসংখ্য প্রাণের স্পর্শে সরস করতে।তাই জীবনে উৎসবের প্রয়োজন অপরিসীম। তাই বাঙালি মাত্রই উৎসবপ্রিয়। তাই যে-কোনো বিষয়কেই তারা উৎসবে রূপায়িত করে।

একালে ঐতিহ্যবাহিত উৎসবগুলির পাশাপাশি গ্রামীণ ঐতিহ্যকে মনে রেখে কিছু নাগরিক উৎসবের সূচনা ঘটেছে। নানা সাংস্কৃতিক উৎসবকেও বাঙালি তার জীবনযাত্রার অঙ্গ করে তুলেছে এর মধ্যে চলচ্চিত্র উৎসব, নাট্যোৎসব, কবিতা উৎসব, বইমেলা উৎসব উল্লেখযোগ্য। তাই-

'নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান'

চন্দ্রযান ৩

"আয়-আয় চাঁদমামা টি দিয়ে যা, চাঁদের কপালে চাঁদ টি দিয়ে যা"
ভূমিকা:-
ছেলে ভোলানো ছড়ার চাঁদমামা আজ বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে নতুন দিগন্তের সূচক হতে চলেছে। কারণ ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার অতি সম্পত্তি এক অভিনব মাইল ফলক হল “চন্দ্রযান-৩“। এটি হলো ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা বা ISRO (Indian Space Research Organization) কর্তৃক পরিচালিত ভারতের চন্দ্রঅভিযান কর্মসূচির অন্তর্গত তৃতীয় চন্দ্র-অন্বেষণ অভিযান।

প্রধান লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য
ইসরোর বিজ্ঞানীরা চন্দ্রযান ৩-এর যে লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যগুলি নির্ধারণ করেছেন, সেগুলি হলো –

১) এক নম্বর হচ্ছে, চাঁদের পৃষ্ঠের গঠন আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য চন্দ্রপৃষ্ঠে উপলব্ধ উপকরণগুলির উপর ইনসাইড পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষা চালানো।

২) চাঁদের রোভারে লোটারিং ক্ষমতা পর্যবেক্ষণ এবং প্রদর্শন করা।

৩) চাঁদের গর্তগুলিতে কয়েকশো কোটি বছর ধরে সূর্যের আলো পড়েনি তাই সৌরজগতের সৃষ্টির নানা তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের দক্ষিণ মেরুর অংশটা থেকেই। সেই জন্য সেখানে নিশ্চয়ই অনেক তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

৪) গর্তগুলি সব সময় ছায়ায় ছায়ায় থাকে। আশা করা যাচ্ছে সেখানে ১০০ মিলিয়ন টন জল আছে, সেই গর্তগুলোতে যেহেতু সূর্যের আলো পৌঁছায়নি।

৫) চাঁদে থাকতে পারে অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন, সিলভার, মার্কারি, সোডিয়াম মিথেনের বিশাল ভান্ডার এবং ভবিষ্যতে চাঁদের মাটিতে মহাকাশ অভিযানের কাজে লাগানো। তো এইসব কারণে কিন্তু চন্দ্রযান অভিযানের গুরুত্ব আরো বেশি হয়ে উঠেছে।


অভিযানের রূপরেখা
আসলে অভিযানের রূপরেখা কি? অভিযানে প্রপালশন মডিউল launder ও rover ব্যবহৃত হয়েছে, তবে কোন কৃত্রিম উপগ্রহ প্রেরিত হয়নি। অন্ধপ্রদেশ রাজ্যের শ্রীহরিকোটায় অবস্থিত সতীশ ধওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে চন্দ্রযান মহাকাশযানের সফল উৎক্ষেপণ করেছে ইসরো। এই অভিযানের মাধ্যমে পূর্বসূরী USRR, NASA এবং CNSA এদের পরেই ইসরো চাঁদে সুরক্ষিত অবতরণে সক্ষম চতুর্থ মহাকাশ সংস্থায় পরিণত হয়েছে এবং এটা ভারত তথা ভারতবাসীর কাছে একটা গর্বের বিষয়।

অবতরণ স্থল নির্বাচন
চন্দ্রযান তিনের সম্ভাব্য অবতরস্থল গুলির জন্য বৈজ্ঞানিকরা কঠোর মানদণ্ড নিয়ে চাঁদের দক্ষিণ মেরুকে নির্বাচন করেছিলেন কারণ চন্দ্রপৃষ্ঠের দক্ষিণ মেরু স্থানগুলি পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান চন্দ্রপৃষ্ঠের অংশের পরিধি গুলি নয়। এই অংশের স্থানগুলির সমতল ছিল এবং ল্যান্ডার অবতরণস্থলের কাছে পৌঁছালে স্থানগুলি থেকে যাতে কোন প্রকার বস্তু উড়ে আসতে না পারে তা সুনিশ্চিত করা হয়েছিল লান্গ্মুয়ার প্রোব দ্বারা।

উৎক্ষেপণ
১৪ জুলাই শুক্রবার নির্ধারিত সময় দুপুর দুটা বেজে ৩৫ মিনিটে এল ভি এম থ্রি রকেট কমলা সাদা ধোঁয়ার মধ্য দিয়ে চাঁদের মাটির স্পর্শের লক্ষ্যে রওনা দিল। এই চন্দ্রযাত্রীর চন্দ্র অভিযানের সফল উৎক্ষেপনের সারা ভারত এক ইতিহাস রচনা হলো। মাত্র ১৬ মিনিটের মধ্যে ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৭০ কিলোমিটার দূরে মহাকাশযানটি তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৌঁছে যায়। ২৩ আগস্ট ঠিক সন্ধ্যা ছটা বেজে চার মিনিটে বিক্রম সফলভাবে সফটল্যান্ডিং (Soft-landing) করে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে।


সাফল্য
উৎক্ষেপণ সফল হওয়ার ফলে একদিকে যেমন ভারতীয় স্পেস রিচার্জ প্রোগ্রাম কয়েক কদম এগিয়ে গেল, ঠিক তেমনি ভারত বিশ্বের অনেক দেশকে পিছনে ফেলে দিল। মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে। চন্দ্র অবতরণের ক্ষেত্রে আমেরিকা রাশিয়া চীনের পর চতুর্থ দেশ হিসাবে ভারত সফলভাবে চাঁদের মাটিতে পা রেখেছে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান পাঠানো আর এইখানেই ভারতের চূড়ান্ত সাফল্য, প্রথম দেশ হিসাবে ভারতের নাম গর্বের সঙ্গে লেখা থাকবে।।

প্রযুক্তিগত দিক
সোনাতে মুড়ে প্রায় চার লক্ষ কিলোমিটার দূরে গেছে ভারতের চন্দ্রযান ৩। এই সোনা আসলে পলিমাইড এবং অ্যালুমিনিয়াম-এর একটি মিশ্র ধাতু, যার সামনে রয়েছে অ্যালুমিনিয়াম। “বিক্রম” ও “প্রজ্ঞান“-কে সচল রাখতে সূর্যের বিকিরণ থেকে রক্ষা করতে এই ব্যবস্থা। তা নাহলে মহাজাগতিক রশ্মির ঝড়ঝাপটাই গরম হয়ে যন্ত্রনা গুলি বিকল হয়ে পড়তে পারে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বিজ্ঞানীরা মনে করেছেন পৃথিবীতে শক্তির চাহিদা মেটাবে চাঁদ। শক্তির প্রয়োজনে মেটাতে কয়লা বা প্রকৃতির গ্যাস লাগবে না। পৃথিবীর উষ্ণায়নের দিক থেকেও রক্ষা করবে চাঁদের শক্তি। আগামী ৩০ বছরে চাঁদ পৃথিবীর যাবতীয় শক্তির চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে এর প্রধান কারণ হিসেবে বৈজ্ঞানিকরা মনে করছেন হিলিয়াম মৌল।

পৃথিবীতে ৫ হাজার কিলো ওজনের কয়লা পোড়ালে যতটুকু শক্তি উৎপন্ন হয় চাঁদের মত ৪০ গ্রাম হিলিয়াম মৌল থেকে তৈরি হবে ততটা শক্তি। পৃথিবীর পুরো বায়ুমন্ডলে বাধা পেয়ে সূর্যের হিলিয়াম মৌলটি আর পাওয়া যায় না। কিন্তু চাঁদে বায়ুমণ্ডল না থাকায় সূর্য থেকে আগত হিলিয়াম থ্রি মৌলটি অবিকৃতই থেকে যায়।

চাঁদে আমেরিকা যতগুলো অ্যাপেলো মিশন পাঠিয়েছে তাদের সকলেরই লক্ষ্য ছিল আমাদের উপগ্রহের ওই তেজস্ক্রিয় মৌলগুলির সন্ধান ও সেগুলি কি মাত্রায় রয়েছে তার খোঁজ খবর নেওয়া ।

অর্থায়ন
ইসরোর প্রকল্পটির প্রাথমিক অর্থায়নের জন্য অনুমোদন করেছিল ৭৫ কোটি টাকা। যার মধ্য ৬০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি সরঞ্জাম এবং অন্যান্য ব্যয়ের জন্য এবং বাকি ১৫ কোটি রাজস্ব ব্যয়ের জন্য। তথ্য অনুসারে সমগ্র প্রকল্পটির সফলভাবে সম্পন্ন করতে ৬১৫ কোটি ভারতীয় টাকা খরচ হয়েছে।


প্রমুখ বিজ্ঞানীদের ভূমিকা
চন্দ্রযান ৩ মিশনের পেছনে রয়েছে একশোর বেশি বিজ্ঞানী এবং সহযোগীদের অক্লান্ত পরিশ্রম। যে সমস্ত বিজ্ঞানীগণ এই প্রকল্প ভূমিকা নিয়েছেন তারা হলেন শ্রীধর পানিকর সোমনাথ (ইসরোর চেয়ারম্যান) এবং মুথয়া বনিতা (প্রজেক্ট ডিরেক্টর)।

চন্দ্রযান-৩ মিশনে প্রায় ৫৪ জন মহিলা ইঞ্জিনিয়ার বা বিজ্ঞানী অংশগ্রহণ করেছিলেন। পুরো টিমের মধ্যে ২৫ জন বাঙালি বিজ্ঞানী বা ইঞ্জিনিয়ারের প্রত্যক্ষ অংশীদারত্ব রয়েছে।

বাঙালি বিজ্ঞানীদের অবদান
Chandrayaan 3 সফল উৎক্ষেপণের পেছনে রয়েছে প্রায় ২৫ জন বঙ্গ সন্তানের অদম্য কৃতিত্ব। হুগলি থেকে পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা থেকে কলকাতা। বাংলার একেকটি রত্নের নিরলস পরিশ্রম দেশকে চাঁদে পৌঁছে। মহাকাশ বিজ্ঞানেও বাঙালিরা যে রিসার্ভ বেঞ্চে বসে থাকার পাত্র নন, তার প্রমাণ মিলল ভারতের এই গৌরবান্বিত মিশন থেকেই। বন্ধ ঘরে বদ্ধ না থেকে, বিশ্ব থেকে মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য সমাধানে ছুটে গিয়েছেন তাঁরা।

রামকৃষ্ণ মিশনের বেলুড় প্রাক্তন ছাত্র অমিত মাজি, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের মানস সরকার, উত্তর দিনাজপুরের অনুজ নন্দী, উত্তরপাড়ার জয়ন্ত লাহা, রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে উত্তীর্ণ মৌমিতা দত্ত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী বিজয় কুমার দাই, সায়ন চট্টোপাধ্যায়, অমিতাভ গুপ্ত, সাউথ পয়েন্ট প্রাক্তন ছাত্র অভ্রজিত রায়, ডন বস্কো স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সৌরভ বসু, হুগলির উত্তরপাড়ার সুমিতেশ সরকার এই মিশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

দেবজ্যোতি ধর, কৌশিক নাগ, তমলুকের আর্য রানা, বহরমপুরের টসকিল ওয়ারা, যাদবপুরের কৃশানু নন্দী, বিশ্বভারতীর মহম্মদ মোশারফ হোসেন, কলকাতা থেকে সৌম্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়, যাদবপুরের রাজীব সাহা। চন্দ্রযান প্রজেক্টের ডেপুটি ডিরেক্টর তুষার কান্তি দাস, রয়েছেন চয়ন দত্ত, IIST থেকে সৌরভ মাজি, নদিয়া থেকে পীযুষ কান্তি প্রামাণিক এবং বেসু থেকে রিন্টু নাথ।

উপসংহার
দাদু দিদিমার গল্পে চাঁদের চরকা কাটা বুড়ি কিংবা পাশ্চাত্যের কল্পবিজ্ঞানে চাঁদের বাসিন্দাদের উল্লেখ থাকলেও আদতে কিন্তু চাঁদ প্রাণহীন। বাড়ির ছাদ থেকে খালি চোখে দেখে প্রাণহীন মনে হলেও, ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে সাফল্য চাঁদকে যেন আরো বেশি প্রাণবন্ত করে তুলেছে।সমস্ত দেশবাসীর কাছে তেইশে আগস্ট ২০২৩ দিনটি হৃদয়ে ভারতের ইতিহাসের সর্বাক্ষরের লেখা থাকবে।

অতীতের অসফলতা কটুক মন্তব্যকে ছিন্ন-ভিন্ন করে, আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে মহাকাশ গবেষণার আগ্রহ, এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে উজ্জ্বল দিগন্তের প্রশস্থ পথ খুলে দিয়েছে ইসরো চন্দ্রযান-৩ সফল অভিযান।

** [যদি বিশেষভাবে চন্দ্রযান-৩ সাফল্যে বাঙালি বিজ্ঞানীদের ভূমিকা আছে তাহলে এত বিস্তারিতভাবে লিখবে নইলে শুধুমাত্র অল্প সংক্ষেপে লিখে ছেড়ে দেবে।]

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার / পরিবেশ দূষণ ও মানবজীবন

❝বিষে ভরা বাতাস, জলে দূষিত মেশে,
এই সব কুকীর্তি করে মানুষই হাসে।❞

ভূমিকা :—

মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে এক অন্তর্নিহিত সম্পর্ক। কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতি এবং প্রযুক্তির অপব্যবহারে মানুষ নিজেই আজ তার আশ্রয়স্থলকে ধ্বংস করছে। আকাশ, বাতাস, জল, গাছপালা এবং প্রাণীকূলকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে মানব সভ্যতা। প্রকৃতির এই অপরিমেয় দান মানুষকে দিয়েছে জীবনধারণের সব উপকরণ।

কিন্তু মানুষ তার প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। শিল্পায়ন, নগরায়ণ, যানবাহনের বৃদ্ধি, এবং অসচেতন ব্যবহারের কারণে পরিবেশ আজ চরমভাবে দূষিত। এই দূষণ শুধু প্রাকৃতিক ভারসাম্যকেই বিঘ্নিত করছে না, বরং মানবজীবনের অস্তিত্বকেও প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।


পরিবেশ দূষণের প্রেক্ষাপট :—

মানুষ তার বিদ্যা, বুদ্ধি দিয়ে এবং অনলস পরিশ্রমে তার চারপাশের পরিবেশকে আরও সুন্দর করে সাজিয়েছে । প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে বেশি মণিমানিক্য সংগ্রহ করে মানুষ উষর মরুভূমির বুকেও ফুটিয়েছে সোনালী ফসল । কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আর স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষের লোভে প্রাকৃতিক পরিবেশ আজ নানান ভাবে দূষিত হচ্ছে ।

পৃথিবী আমাদের বাড়ি, কিন্তু দিনের পর দিন আমরা নিজের বাড়িটাকেই নষ্ট করে ফেলছি পরিবেশ দূষণের মাধ্যমে। এই দূষণের কারণে আমাদের স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে, প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, এবং ভবিষ্যতে আমাদের পরের প্রজন্মের জন্য এটা একটা বিপজ্জনক পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।


পরিবেশ দূষণের প্রকারভেদ ও তার প্রভাব :—
১. বায়ু দূষণ:
বায়ু মানুষের জীবনের অপরিহার্য উপাদান। কিন্তু কলকারখানার ধোঁয়া, যানবাহনের নির্গত কার্বন-ডাই অক্সাইড, এবং জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ু আজ বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের ক্যান্সার, এবং হাঁপানির মতো রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২. জল দূষণ:
জলের আর এক নাম জীবন। অথচ রাসায়নিক বর্জ্য, নর্দমার ময়লা, এবং শিল্প-কারখানার তরল বর্জ্য নদী ও পুকুরে মিশে জল দূষিত করছে। এর ফলে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, কলেরার মতো জলবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে।

৩. শব্দ দূষণ:
যন্ত্রচালিত যানবাহনের হর্ন, মাইক্রোফোনের উচ্চ শব্দ, এবং বাজি-পটকার কোলাহলে শব্দ দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এর ফলে শ্রবণক্ষমতা হ্রাস, মানসিক চাপ, এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা বাড়ছে।

৪. মাটি দূষণ:
অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার জমির উর্বরতা নষ্ট করছে। কৃষিজাত পণ্যে বিষক্রিয়ার উপস্থিতি মানব শরীরে নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি করছে।

৫. সোশ্যাল মিডিয়া ও মন দূষণ:
বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া একটি নতুন ধরনের দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভুয়ো খবর, অপসংস্কৃতি, এবং অশ্লীল কনটেন্ট মানুষের মন এবং চিন্তাশক্তিকে দূষিত করছে। এই ‘দৃশ্য দূষণ’ কিশোর-তরুণদের মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।


পরিবেশ দূষণের প্রতিকার :—
"Take care of the earth and she will take care of you."

পরিবেশ দূষণ রোধে আমাদের সবার এগিয়ে আসা প্রয়োজন। কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচে দেওয়া হলো—

১. গাছ লাগানো ও সংরক্ষণ: বেশি করে গাছ লাগাতে হবে এবং বনাঞ্চল ধ্বংস বন্ধ করতে হবে। গাছ বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেন ছড়ায়, যা পরিবেশ দূষণ কমাতে সাহায্য করে।

২. বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ: কলকারখানায় দূষণ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বসাতে হবে। যানবাহনে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি যেমন: বিদ্যুৎ বা ব্যাটারি চালিত গাড়ির ব্যবহার বাড়াতে হবে। প্লাস্টিক এবং কয়লা পোড়ানো বন্ধ করতে হবে।

৩. জল দূষণ রোধ: কলকারখানার বর্জ্য পরিশোধন করে নদী বা জলাশয়ে ফেলতে হবে। নর্দমার জল প্রক্রিয়াকরণে ব্যবস্থা নিতে হবে। নদী, পুকুর ও সমুদ্রকে দূষণমুক্ত রাখতে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।

৪. শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ: যানবাহনের হর্ন ও মাইক্রোফোনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। বাজি-পটকার ব্যবহার কমাতে হবে।

৫. মাটির দূষণ কমানো: রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যের ব্যবহার করতে হবে।

৬. সোশ্যাল মিডিয়ার সচেতন ব্যবহার: ভুয়ো খবর এবং অশ্লীল কনটেন্ট ছড়ানো বন্ধে কঠোর আইন এবং জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।

৭. জনসচেতনতা বৃদ্ধি: পরিবেশবান্ধব জীবনযাত্রার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। স্কুল, কলেজ, এবং গণমাধ্যমের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।

উপসংহার :—
পরিবেশ দূষণ আমাদের অস্তিত্বের ওপর এক ভয়াবহ হুমকি। মানবসভ্যতা যদি এই সংকট থেকে রক্ষা পেতে চায়, তবে প্রকৃতির সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে। সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখাই হলো মানবজাতির মূল লক্ষ্য।

"The Earth does not belong to us; we belong to the Earth."

আজকেই আমরা যদি পরিবেশ সুরক্ষার প্রতি সচেতন না হই, তাহলে কাল হয়তো আমাদের বসবাসের জন্য কোনো পরিবেশই থাকবে না। একমাত্র সমবেত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই আমরা পরিবেশকে দূষণমুক্ত করতে পারি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে পারি।
"সজাগ হও করো প্রতিজ্ঞা, সবুজে ভরাও ধরণী।
পরিবেশকে রক্ষা করে, আনো সবারে আলোকিনী।"


চরিত্র গঠনে খেলাধুলার ভূমিকা / চরিত্র গঠনে শরীরচর্চা / মানুষের চরিত্রের উপর খেলাধুলা ও শরীরচর্চার প্রভাব

" সুস্থ শরীর গড়ে তোলে সুস্থ একটি মন
খেলাধূলার ভুবন মাঝে লুকিয়ে আছে জীবন ধন "
ভূমিকা :–

মন ও মননের চর্চার পাশাপাশি শরীরের চর্চাও যে প্রয়োজন সে কথা মানুষ বহুযুগ আগেই উপলব্ধি করেছে। আর “Health is wealth” -এই সুবচনকে কার্যকরি করতে হলে খেলাধূলা অপরিহার্য। খেলাধুলারর মাধ্যমে নিজের চরিত্রের দুর্বল দিকগুলি কাটিয়ে ওঠা যায়। অর্থাৎ চরিত্র গঠনে খেলাধূলা বিশেষ সাহায্য করে।


সেকালের শরীরচর্চা :–

প্রাচীনকালের আশ্রমিক শিক্ষাব্যবস্থায় ছাত্রদের অধ্যায়নই ছিল একমাত্র তপস্যা। তবে তাঁদের ব্যায়াম, প্রাণায়াম, ব্রাহ্মমুহুর্তে শয্যাত্যাগ, আশ্রমিক কার্যাবলী অনুসরন করতে হত কেবলমাত্র শরীরকে সুস্থ্য রাখার জন্য। তাঁরা বলতেন- “শরীরাং আদ্যং খলু ধর্মসাধনম্”।

খেলাধুলা ও শিক্ষা :–

শিক্ষা ও খেলাধুলা একে অন্যের পরিপূরক। তাই বিদ্যালয় জীবনে পড়াশুনার পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চার বিশেষ প্রয়োজন। এতে যেমন দেহ সুস্থা থাকে তেমন মনও নির্মল থাকে। রুগ্ন ও অসুস্থ শরীর নিয়ে পড়াশুনা করা যায় না। তাই শরীর ঠিক রাখতে খেলার প্রয়োজন অর্থাৎ

"খেলাধুলা শিক্ষার অঙ্গ"।
চরিত্র গঠনে খেলাধুলা :–

চরিত্র গঠনে খেলাধূলার একটি বিশিষ্ট স্থান আছে। নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা, কর্তব্যবোধ, সময় সচেতনতা, সহযোগীতা বোধ, নীতিবোধ সততা প্রভৃতি মহৎ গুন গুলি খেলাধূলার মাধ্যমে অর্জিত হয়। তা শুধু ব্যক্তিত্ব উজ্জ্বল করে না, সমৃদ্ধ করে সমাজকেও।

প্রতিযোগী মনের সৃষ্টি :–

বিখ্যাত, শিক্ষাতাত্বিক হার্বার্ট স্পেন্সার খেলাধূলাকে বলেছেন- “অতিরিক্ত শক্তির প্রকাশ পথ” অর্থাৎ খেলাধুলার মাধ্যমে প্রতিযোগী মনের সৃষ্টি হয়। নেতৃত্বলাভের আশঙ্কা জাগ্রত হয়। যা ভবিষ্যতে নিজের ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরতে সাহায্য করে।

খেলার ছলে শিক্ষা :–

বর্তমানে শিক্ষা মনস্তাত্বিকগন শিশুশিক্ষায় “Playway in education” -পদ্ধতি চালু করার কথা বলছেন। এই ব্যবস্থায় কঠিন পাঠ্যপুস্তকাও শিক্ষার্থীর কাছে সহজ হয়ে ওঠে। তাছাড়া খেলাধূলার মাধ্যমে শিক্ষা প্রয়োগ করলে শিক্ষার্থির মনোযোগ আকর্ষন ঘটে। এমনকি ছোটদের জন্য বিভিন্ন ছড়া বা রাইমকে খেলা ও নাচের অঙ্গ-ভঙ্গীমার মাধ্যমে আনন্দদায়ক শিক্ষাপদ্ধতি চালু হয়েছে।


খেলার নানা দিকসমূহ :–
"গীতা পাঠের চেয়ে ফুটবল খেললে স্বর্গের দ্বারস্থ হওয়া যায়"
‐বিবেকানন্দের এই উক্তি থেকে খেলার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারি। বর্তমানে ব্যারামচর্চা, লাঠিখেলা, তিরন্দাজি, ব্রতচারি, সাঁতার এমনকি বিভিন্ন দলগত খেলা যেমন- ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, কবাডি, বাস্কেটবল বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু করা হয়েছে।

সতকর্তা :–
তবে একাথা ঠিক যে লেখাপড়া ত্যাগ করে খেশাধূলার কথা কেউ বলেনি। মনে রাখা দরকার, পড়াশোনার সঙ্গেই খেলাধূলা, পড়াশোনাকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে নয়। অতিরিক্ত খেলায় শরীর ক্লান্ত হয়ে গেছে। ইচ্ছা থাকলেও লেখাপড়ায় আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করা মুশকিল।

উপসংহার :–
মানুষকে চরিত্রবান ও ব্যক্তিসত্তা গড়ে তুলতে খেলার গুরুত্ব অপরিসীম। শৈশব ও কৈশরের সুকুমার প্রবিত্তিগুলি বজায় রাখতে খেলাধূলা একান্ত প্রয়োজন। তাছাড়া খেলাধুলার মাধ্যমে শুধু জাতীয় ঐক্য নয় বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তোলা যায়। তাই বলা হয়,–

"Playing with exercise makes a man healthy, wealthy, and wise."

বিজ্ঞান বনাম কুসংস্কার

❝মেনে যত বাঁধা টিকটিকি হাঁচি,
বাঁচিতে বাঁচিতে প্রায় মরিয়াছি।❞

ভুমিকা :—
যে জাতি জীবনহারা, অচল, অসার সেই জাতীর যুক্তি বিচারের স্রোত পথ তুচ্ছ, আচারের শুষ্ক মরু বালুকারাশিতে হারিয়ে যায়। টিকটিকির ডাক, হাঁচির শব্দে থমকে যায় তার অগ্রগতি। সেই জাতি জীবন্মৃত, তার প্রান শক্তি স্তিমিত। ভারতবর্ষের এখন সেই অবস্থা স্বাধীনতার এত বছর বাদেও “পদে পদে বাঁধে তারে জীর্ণ লোকাচার”। এই কুসংস্কারকে পরাস্ত করাতে পারে একমাত্র বিজ্ঞান মনষ্ক চিন্তধারার প্রসার।

কুসংস্কার কী? ~~ সভ্যতাকে যাচাই না করে অন্ধবিশ্বাস, যুক্তিবোধহীন মিথ্যা ধারনার বশবর্তী হওয়াকে বলে বেডাংষ্কার। ইংরেজি ‘Superstition’ এর বাংলা প্রতিশব্দ কুসংস্কার, কুসংস্কারের মূল কারন হল অজ্ঞতা ও অনুবিশ্বাস। বিজ্ঞান নির্ভর যুগেও অশিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত এমনকি শিক্ষিত মানুষও রোগ ও ব্যাধি থেকে আরোগ্য পেতে মন্ত্র-তন্ত্র, ঝাঁড়-ফুঁক করে। ডাইনি, জিন, ভূত-প্রেত সন্দেহ করে माনুষ মানুষকে হত্যা করে।

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার :—
বিজ্ঞান হল এমন জ্ঞান যা পরিক্ষিত সত্য। যা মানুষের কল্যানের জন্যই কাজে লাগে। আর কুসংস্কার মূলত কতকগুলি অন্ধবিশ্বাস, যা মানুষের অমঙ্গল করে, মানুষকে সংস্কারের সংকীর্ণ বেড়াজাল থেকে মুক্তি করার জন্য বিজ্ঞান নানা প্রচারাভিয়ান গড়ে তুলেছে। মানুষের সংস্কার মুক্তির জন্য গান চেতনা ও সুশিক্ষা বৃদ্ধি হল এই আনুগত্য থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম পথ। সুশিক্ষাই মানুষকে আত্মনির্ভর করে তোলায় বিজ্ঞানের লক্ষ্য। একমাত্র বিজ্ঞানই পারে মানুষকে কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে। তাই আমাদের বলতে হবে–
❝বিজ্ঞানের টোপর পরে আমরা হব শক্তিমান
অশুভকে পায়ে ঠেলে, শুভকে করি প্রনাম।❞
কুসংস্কারের উৎপত্তি :—
আদিম মানুষ পাহাড়ে এবং জঙ্গলে থাকত, তখন বিজ্ঞানের জন্ম হয়নি। তখন মানুষ অতিপ্রাকৃত সত্তায় বিশ্বাস করত। যে-কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বিপর্যয়ের মূলে দৈবের হাত আছে বলে তারা মনে করত। রোগশোকের মূলেও অপশক্তি অথবা দেবতাদের রোষ, ভূতপ্রেত প্রভৃতি অশরীরী আত্মার কারসাজি আছে বলে তারা মনে করত। এভাবে জীবনের চলার পথের যত কিছু বাধাবিঘ্ন, বিপদ সংকেত, শুভ-অশুভ, রোগ-নিরোগ সবকিছুর মূলে কোনো না কোনো দেবতা আছে বলে তারা মনে করত।

অন্ধবিশ্বাস থেকে মুক্তি :—
বিজ্ঞানচেতনা দিনের পর দিন প্রসারিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মানুষ আজও অন্ধবিশ্বাস থেকে মুক্তি লাভ করতে পারেনি। বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মীয় ভাবাবেগের সংঘাত একটা নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। জীবন থেকে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারকে দূর করতে হলে তথ্য ও তত্ত্বকে চোখ বুজে গ্রহন না করে যুক্তি ও বিচারের কষ্টি পাথরে মূল্যায়ন করতে হবে। সত্যান্বেষী মনোভাবই অন্ধবিশ্বাস থেকে মুক্তির যথার্থ পথ l

অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের স্বরুপ :—
বিজ্ঞানচেতনা ও কুসংস্কার দু’য়ের অবস্থান বিপরীতমুখী। বিজ্ঞানের প্রভৃত উন্নতির করলেও নিরীহ নারীকে ডাইনি বলে অমানবিকভাবে হত্যা করা হচ্ছে। বিজ্ঞানের যুগে সতীদাহ-সহমরন, মাদুলি-তাবিজ-কবচ ইত্যাদি ধর্মীয় ব্যাধির অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে। প্যাঁচার ডাককে মানুষ আজও অশুভ বলে, খাবার টেবিলে এখনো মানুষ তিন, তেরো, সতেরো জন একসঙ্গে বসে খেতে দ্বিধাবোধ করে। বিজ্ঞানি আইনস্টাইন কুসংস্কারের উৎস হিসেবে ভয় ও আতঙ্কের কথা বলেছেন। তিনি লিখেছেন—

"It is this undefined source of fear and hope which is the genesis of irrational superstition."

সামাজিক কুসংস্কারের প্রাবল্য :—
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা সত্ত্বেও ভারতবর্ষের মতো অজস্র দেশ আজও কুসংস্কারের সংকীর্ণ খাতে আবদ্ধ। সামাজিক কুসংস্কারগুলি যেমন– শিশু হত্যা, ডাইনি হত্যা এসব দেশে প্রায়শই ঘটছে। এসব ঘটনার থেকেও বেশি কুরুচিকর ও লজ্জাজনক ধর্মীয় কুসংস্কার ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে ২১ সেপ্টেম্বর গনেশমূর্তির দুধপান, পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় এই সংস্কারকে পৃষ্ঠটান বলা হয়। দৈব-অলৌকিকতাকে কেন্দ্র করে মানুষ হিংসাত্মাকেভাবে মজে ওঠে।

শিক্ষিত মানুষের কুসংষ্কার :—
শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়েও মানুষ কুসংস্কার থেকে মুক্ত হতে পারেনি। বৈজ্ঞানিক মানুষ হয়েও তাবিজ-মাদুলি-কবচ দেখা যায়। ডাক্তার ব্যক্তিও চিকিৎসাবিদ্যার পাশাপাশি জ্যোতিষ বিদ্যার ওপর আস্থা রাখে। বহু শিক্ষিত লোক রোগ থেকে আরোগ্য পেতে সাধু-মৌলবীদের ‘ডালপড়া’, ‘চিনিপড়া’ খান চোখ বুজে। প্রকৃত শিক্ষার অভাবের ফলে এই কুসংস্কারগুলি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। অজ্ঞতা ও ভীরুতা এই কুসংস্কারের প্রানকেন্দ্র, একমাত্র যুক্তিনিষ্ঠ শিক্ষা এই সমস্ত কুসংস্কারকে দূর করতে পারে।

কুসংস্কার দুরীকরনে ছাত্রসমাজ :—
কুসংস্কারের হাত থেকে মুক্তি দিতে পারে ছাত্রসমাজ, ছাত্ররাই পারে কুসংস্কারের জগৎদল পাথরটাকে সমাজের মানুষের জীবন থেকে সরিয়ে দিতে। তার থেকেও বড়ো কথা হল কুসংস্কার থেকে মুক্ত হতে হলে সবার আগে শিক্ষার প্রসার প্রয়োজন। শিক্ষা আনার চেতনা আনবে মুক্তি-কুসংস্কারের হাত থেকে মুক্তি।


উপসংহার :—
একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ধাপে দাঁড়িয়ে মানুষকে আরো বেশি করে Super Science হতে হবে। এখনও আমরা সেই আদিকালের প্রথা, আচার, সংস্কারকে আঁকড়ে ধরে থাকবো? কেন বিজ্ঞানের হাত ধরে চলব না? এসো মুক্ত করো, মুক্ত করো এই দ্বার। কুসংস্কারের হাত ধরে পৃথিবীতে ঢের জন্ম নষ্ট হয়ে গেছে। কেবল বিজ্ঞান চেতনায় পারে সংস্কারের অমানবিকতা ভেদ করে আলোকতীর্থে নিয়ে যেতে। তবেই আমরা সুদিনের মুখ দেখতে পাব। আর কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলব–
❝ধর্মকারার প্রাচীরে বজ্র হানো,
এ অভাগা দেশে জ্ঞানের আলো আনো।❞

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানের জয়যাত্রা

"যদি বেঁচে যাও এবারের মতো, যদি কেটে যায় মৃত্যুর ভয়
জেনো বিজ্ঞান লড়েছিলো একা, মন্দির মসজিদ নয়।"

ভূমিকা :–   

– এটা একটা ছড়া হলেও এটা বাস্তবে সত্যি। কারণ বিজ্ঞান একা লড়েছিল বলে আজ বিজ্ঞানের এত অগ্রগতি। কোনো মনীষী বলেছিলেন, উনিশ শতকটা ছিল দার্শনিকদের যুগ এবং সভা সমিতির যুগ। তারপরে বিশ শতক এলো বিজ্ঞানীদের যুগ আর বর্তমানের যুগ অর্থাৎ একবিংশ শতাব্দীর হল “বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগল অন্বেষণের যুগ”। আধুনিক সভ্যতায় বিজ্ঞান এক অপরিহার্য বিষয়। ব্যবহারিক থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনে এক-পা চলতে গেলে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া চলতে পারি না। এক কোথায় বলতে গেলে বিজ্ঞান ছাড়া আমাদের জীবন অচল।


বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সম্পর্ক :–   

নিত্য নতুন সমস্ত সত্যের সন্ধানে বিজ্ঞান লেগে রয়েছে এবং সমস্ত সত্যকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন ব্যবহারিক জিনিস আবিষ্কার করে চলেছে। তার মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি আবিষ্কার হল ‘বিদ্যুৎ’, যা এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রযুক্তিগত অপরিহার্য ফসল।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে বিজ্ঞান। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত আমারা যা কিছু ব্যবহার করি, সে সবই বিজ্ঞানের দান। এমনকি রাতে ঘুমানোর সময়ও আমরা বিজ্ঞানের প্রযুক্তিগত বিভিন্ন আবিষ্কারের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভর করে থাকি।

প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞানের অবদান :– 

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত প্রায় প্রতিটি জিনিস বিজ্ঞানের দান। দিনের প্রথম পর্বে ঘড়ি আমাদের জানিয়ে দেয় সময়ের সংকেত, রান্নার জন্য ব্যবহৃত হয় প্রেসার কুকার, গ্যাস, মাইক্রোওভেন, ইন্ডাকশন কুকার, মিক্সার, জুসার প্রভৃতি। শীতকালে স্নানের সময় পেয়ে যাই ওয়াটার হিটার। এইসব যন্ত্রপাতি আধুনিক জীবনকে সহজতর করে তুলেছে।

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান :–
"আরো আরো সামগ্রী ভোগ যাতে করে যেতে পারি,
গড় আয়ু বাড়িয়ে দাও বিজ্ঞান খুব তাড়াতাড়ি।"

চিকিৎসাক্ষেত্রেও বিজ্ঞান কৃতিত্বের ছাপ রয়েছে। আগে মানুষ যেসব ভয়ংকর মহামারীতে মারা গেছে বিজ্ঞান এসে সেই সমস্ত মহামারীর ঔষধ আবিষ্কার করেছে। ফলে মানুষের গড় আয়ু অনেক বেড়ে গেছে। এখন ক্যানসারের মতো মারণ রোগেরও চিকিৎসা সম্ভব। তাছাড়া, বিভিন্ন ধরণের রোগ নির্ণয়কারি যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলে রোগ নির্ণয় করা সহজ হয়েছে এবং শল্যচিকিৎসা সহজ করার ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের প্রযুক্তির প্রভাবে অনেক উন্নতি ঘটেছে।

কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে বিজ্ঞান :–  
আগেকার দিনে যখন অনাবৃষ্টির কারণে খরা হত সেই বছরে কোন ফসল হতো না। কিন্তু এখন বিজ্ঞানের আবিষ্কারের ফলে ভৌমজল উত্তোলনের মাধ্যমে কৃষি কাজ করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও উচ্চফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কার হওয়ার ফলে কৃষিক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এসেছে। আবার, শিল্প কারখানায় উন্নতমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে কম শ্রমিকে, কম সময়ে এবং কম খরচে বেশি পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে।

শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান :–
আমরা বিদ্যাসাগরের জীবনের কিছু কিছু কাহিনী পড়তে গিয়ে জানতে পেরেছি যে, তিনি রাস্তার ধরে ল্যাম্পপোস্টে থাকা হারিকেনের আলোতে পড়াশোনা করেছেন। এখন বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সহজলভ্য হয়ে ওঠেছে।

প্রথাগতভাবে শিক্ষাব্যবস্থাতেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। পাঠদানের ক্ষেত্রে বড়ো কম্পিউটার ব্যবহার করে সাধারণ ক্লাসরুমকে স্মার্ট ক্লাসরুম করা হচ্ছে। এখন পাঠ্যপুস্তকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন ডিজিটাল স্টাডি মেটেরিয়াল। ইন্টারনেট ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এখন ছাত্রছাত্রীরা ঘরে বসে অনলাইন কোচিং নিতে পারছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি :–
"সময় যাচ্ছে চলে, কাজ করো চটপট
বিজ্ঞান করেছে শত দূরকে করেছে নিকট।"

প্রাচীনকালে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে গেলে ধনী ব্যক্তিরা ব্যবহার করত ঘোড়ার গাড়ি বা গোরুর গাড়ি এবং দরিদ্র মানুষেরা হেঁটেই দূরত্ব অতিক্রম করত। এখন বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থাতেও চরম উন্নতি সাধিত হয়েছে। বিজ্ঞানের আশীর্বাদে মানুষ এখন অসীমদুরকেও নিকট করে ফেলেছে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে পৌঁছাতে হলে মানুষের কাছে দূরত্বটা আর কোনো বাধা নয়।

জল, স্থল এবং বায়ুপথে মানুষ এখন পৃথিবী পরিক্রমা করতে পারে। তাছাড়া, মানুষের তৈরি রকেট এখন গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে পাড়ি দিচ্ছে। মনুষ্য এবং পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি তথ্য আদানপ্রদানের ক্ষেত্রেও বিজ্ঞান আজ সাফল্যের চরম শিখরে পৌঁছে গেছে। চিঠি, টেলিগ্রাম, টেলিফোনের যুগ পেরিয়ে আমরা এখন মোবাইল জামানায় এসে পৌঁছেছি। হাতের তালুতে থাকা স্মার্টফোন ব্যক্তিমানুষকে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করেছে।

বিনোদন ক্ষেত্রে বিজ্ঞান :– 
আগে মানুষ বিনোদন উপভোগ করার জন্য যাত্রাপালা, থিয়েটার এবং সংগীতচর্চা করত। এই বিনোদনের জগতে বিজ্ঞানের প্রথম অবদান ছিল চলচ্চিত্র বা সিনেমা। পর্দায় মানুষের নড়াচড়া দেখে সেদিন মানুষ মুগ্ধ হয়েছিল। এরপর মানুষের বিনোদনের তালিকায় যুক্ত হয়েছিল রেডিও এবং টেলিভিশন।

সিনেমা, রেডিও এবং টিভি বিনোদনের এই তিন মাধ্যম নিয়ে মানুষের আশ্চর্য সীমা ছিল না। সেদিন কেউ ভাবতে পারেনি যে একদিন মানুষ তার পকেটে সমগ্র জগতের বিনোদন-ভান্ডার নিয়ে ঘুরে বেড়াবে। স্মার্টফোন আবিষ্কার হওয়ার ফলে এমনটাই ঘটেছে। বর্তমানে বিনোদন হল সম্পূর্ণ মোবাইল-কেন্দ্রিক। এই কারনেই  স্টিফেন হকিং বলেছেন– “বিজ্ঞান শুধু যুক্তির শিষ্যই নয়, রোমান্স ও আবেগেরও একটি।”

উপসংহার :–
একথাও সঠিক যে, বিজ্ঞান আমাদের দৈনন্দিন জীবন আরামদায়ক করে তুলেছে। কিন্তু সমস্যাটা হল আরামের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে আমরাও যন্ত্রনির্ভর হয়ে যাচ্ছি। এই জন্য আমি বলি–

"বিজ্ঞান, তুমি দিয়েছ বেগ, কিন্তু কেড়েছো আবেগ।"

যে মানুষ যন্ত্র তৈরি করেছে সেই মানুষ যদি যন্ত্রের দাস হয়ে যায় তাহলে দুশ্চিন্তার অবকাশ থেকেই যায়। তাছাড়া, পরিবেশের কথাটাও মাথায় রাখতে হবে। আমাদের নিজেদের সুবিধার্থে অনেক সময় পরিবেশের ক্ষতি করে ফেলি। যেমন, এসি বা ফ্রিজ ব্যবহার করলে সেগুলি থেকে ক্লোরো-ফ্লুরো কার্বন গ্যাস নির্গত হয় যা পরিবেশের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই মানবসভ্যতার স্বার্থে পরিবেশবান্ধব উপায়ে বিজ্ঞানের ব্যবহার করাই কাম্য।


মানব জীবনে বিজ্ঞানের অবদান | প্রতিদিনের জীবনে বিজ্ঞান

❝ আমরা ছিলাম আদিম মানুষ জঙ্গলেতে বাস,
খাদ্য ছিল কাঁচা মাংস বনের লতা ঘাস।
পশুর সাথে নিত্য নতুন হাজার লড়াই করে,
কোনো মতে বেঁচে থাকা বন পাহাড়ের ঘরে।
বিজ্ঞান এসে পালটে দিল চলচিত্র সব,
জীবন পেল নতুন মাত্রা নতুন অনুভব। ❞
ভূমিকা :—
বস্তুতই মানুষের জীবন ছিল অরণ্যাচারী, ছিল না নূনতম আশ্রয়, ছিল না বেঁচে থাকার উপযোগী খাবার। জীবনের সব স্বপ্ন হারিয়ে যেত অন্ধকার গুহার মধ্যে। কোনো মতে বেঁচে থাকতে হতো পশুর সাথে লড়াই করে। অবর্ণীয় এই যন্ত্রনা থেকে মানুষ মুক্তির উপায় খুঁজেছে। আপন বুদ্ধিকে সম্বল করে মানুষ আরণ্যক জীবন থেকে বেরিয়ে এসেছে। মানুষের বুদ্ধির কাছে পরাজিত হয়েছে বিপুল শক্তিধর আরন্যক পশু। মানব সভ্যতার এই বুদ্ধি মনক্স যাত্রাই বিজ্ঞানই হলো কালোত্তীর্ণ সঙ্গী। মানব সভ্যতার এই উত্থান ও বিকাশ মূলেই হলো বিজ্ঞানের দান, বিজ্ঞান ছাড়া মানব সভ্যতা শক্তিহীন, মেরুদন্ডহীন এবং সম্ভবনাহীন।

বিজ্ঞান কী? ~
যে জ্ঞান বিশেষভাবে লাভ করা যায়, তাকে বিজ্ঞান বলে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিজ্ঞান, মানুষের জন্ম ও মৃত্যুতে বিজ্ঞান, মানুষের নিশ্বাস-প্রশ্বাসে বিজ্ঞান।

বিজ্ঞানের অভিযাত্রা :—
একথা অবধারিত যে, আগুনের আবিষ্কার বিজ্ঞানের প্রথম আর্শীবাদ। অগ্নি সম্পদে সমৃদ্ধ হয়ে মানুষ কৃষি ব্যবস্থার করচনা পায়। কৃষি ব্যবস্থার অনুগামী হল সঞ্চয়ের ইচ্ছে। বিভিন্ন গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষ বাস্তুতান্ত্রিক স্বার্থ বুদ্ধিতে উজ্জিবিত হয়, এর ফলশ্রুতি ইউরোপে অধুনিক বিজ্ঞানের প্রভাব পড়েছিল অষ্টাদশ শতকে। বিজ্ঞান গ্রহন করেছিল শিল্পবিপ্লবের স্তুপতির ভুমিকা। বাকশক্তিকে কাজে লাগিয়ে গড়ে উঠেছিল কলকারখানা, সমুদ্রের বুকে চিরে জাহাজ চলাচল করেছিল দূর-দূরান্তে। এভাবে বানিজ্যের প্রসার ঘটেছিল।

প্রাত্যহিক জীবনের বিজ্ঞান :–
এই ভুবনবিজয়ী মুহূর্তকে সাক্ষী রেখে আমরা একবিংশ শতাব্দীর বরণডালা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। তখন বিজ্ঞানই আমাদের একমাত্র নিয়ন্ত্রা। আমাদের প্রতিদিনের জীবন শুরু হয় বিজ্ঞানের মহিমায়। ইলেক্ট্রনিক ঘড়ির এলার্মে আমাদের ঘুম ভাঙে, ইলেকট্রিক রেজারে দাড়ি কোটে মানুষ চা খায়, বৈদ্যুতিক চুল্লিতে খাবার তৈরি হয়। যে খবরের কাগজটি আমাদের চোখের সামনে গোটা দুনিয়ার চিত্র হাজির করে সেটি ছাপা হয়ে আসে অফসেট ওয়েব মেশিনে। এককথায় আজকের মানুষ বিজ্ঞান ছাড়া একমুহূর্ত চলতে পারে না।

কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে বিজ্ঞান :–
মানব সভ্যতার দ্রুত বিকাশের ক্ষেত্রে কৃষি বিপ্লব ও শিল্প বিপ্লবের অবদান অনস্বীকার্য। এমন একদিন ছিল যখন माনুষ লাঙল টানত, এখন জমি চাষ থেকে ফসল বপন ও রোপন, আগাছা উৎপাটন, ফসল ঝাড়াই-মাড়াই সংরক্ষন সব কাছেই বৈজ্ঞানিক যন্ত্র ব্যবহৃত হয়। এর ফলে উৎপাদন বেড়েছে অনেক গুন, শ্রম লাঘব হয়েছে মানুষের সর্বপরি জনবিস্ফোরনকে মোকাবিলা করে মানুষ সন্ধান করেছে আরও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের। একইভাবে শিল্প ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের সুফল মানুষকে দ্রুতগামী করেছে, উৎপাদনশীল করেছ।

যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিজ্ঞান :–
অজানাকে জানতে, অচেনাকে চিনতে বিজ্ঞানই হয়েছে মানুষের সহায়তা। কবিগুরুর ভাষায়–

❝কত অজানারে জ্বালাইলে তুমি
কত ঘরে দিলে ঠাঁই
দূরকে করিলে নিকট
পরকে করিলে ভাই❞
বিজ্ঞানের আশীর্বাদে আজ সারা বিশ্বে আমাদের ঘরের কোণে ঠাঁই পেয়েছে। উপগ্রহ যোগাযোগ ব্যবস্থা নিমেষে যেকোনো প্রান্তের ঘটনা প্রবাহ নিয়ে আসে নাগালে দ্রুতগামী আকাশঘন রকেট আর বিমানে চেপে আমরা রাতারাতি সারা পৃথিবী ঘুরে আসতে সক্ষম।

চিকিৎসা শাস্ত্রের বিজ্ঞান :—
আধুনিক বিজ্ঞান তার আর্শীবাদকে সবচেয়ে বেশি বর্ধিত করেছে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে। বিজ্ঞানের নিরন্তর সাধনায় আজ বহুবিধ দুরারোগ্য ব্যাধি মানুষের নিয়ন্ত্রনে। একদিন রোগে শোকে মানুষ ছিল নিম্নতির ক্রীড়ানক। তখন মানুষই তার কল্যানী প্রচেষ্টায় নিয়তিকে তালবন্দি করেছে। লুই পাস্তুর জলাতঙ্কের প্রতিশোধক আবিস্কার করে যে সম্ভবনার দ্বারা উন্মোচন করে দিয়েছেন। সেই পথ ধরে মানুষ আবিষ্কার করেছে অসংখ্য রকম ভ্যাকসিন। এখন আর ঘাতক ব্যাধি বলে কিছু নেই। এখন এক কথায় বিজ্ঞানই যেন দায়িত্ব নিয়েছে মানুষকে মৃত্যুঞ্জয়ী করার।

বিজ্ঞানের ভালোমন্দ :—
একথা সত্যি যে বিজ্ঞান হয়ে উঠেছে আমাদের অগ্রগতির স্মারক। সেই বিজ্ঞান আবার মানব সভ্যতাকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে নিমেষে। তাই বিজ্ঞানের অবিসংবাদী অগ্রগতিকে সমাজতাত্বিকরা সহজভাবে মেনে নেননি। তাদের মতে, বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, আবার কেড়ে নিয়েছে আবেগ। বিজ্ঞানের যান্ত্রিকতায় মানুষও যন্ত্রে পরিনত হচ্ছে। সহজাত প্রেম-ভালোবাসা, দয়া-দাক্ষিণ্য, সুকুমার বৃত্তি হারিয়ে তারা পরিনত হচ্ছে জড় পদার্থে।

উপসংহার :–
বলাবাহুল্য বিজ্ঞান অভিশাপ না আশীর্বাদ এই তর্ক চলবে অনন্তকাল। তার সত্ত্বেও মানুষ ক্রমান্বয়ে অধিকতর বিজ্ঞানমুখী হচ্ছে। বিজ্ঞানই কুসংস্কারের নাগপাশ থেকে মানুষকে মুক্তি দিচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, আমরা যেন বিজ্ঞানকে নিয়ন্ত্রন করতে পারি। নিজেকে বিজ্ঞানের ক্রীত দাসে পরিণত না হই। কবির সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে হবে—

❝বিজ্ঞানের টোপর পরে আমরা হব শক্তিমান,
অশুভকে পায়ে ঠেলে শুভকেই করি প্রনাম।❞

শতবর্ষের আলোকে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

ভূমিকা :–

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, বাংলা সাহিত্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করতেন তিনি। তাঁর কবিতায় ছিল বিদ্রূপ, ব্যঙ্গ, প্রতিবাদ, আবার ছিল স্বপ্ন ও আশা, সময়ের প্রতিধ্বনি, সমাজের বাস্তবতার প্রতিফলন। তাঁর জীবন এবং সাহিত্যকর্ম একসঙ্গে বিশ্লেষণ করলে বাংলা সাহিত্যের এক সময়কালের ছবি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শতবর্ষ পেরিয়েও তাঁর কবিতা আজও তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করে।

তার লেখা- "ও পাখি, তুই কেমন আছিস, ভাল কি?, এই তোমাদের জিজ্ঞাসাটাই মস্ত একটা চালাকি।" -এই উক্তিটি অনেকের মনেই গেঁথে আছে।

জন্ম ও বংশ পরিচয় :–

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৪ সালের ১৯ অক্টোবর, বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার চান্দা গ্রামে। তাঁর শৈশব কেটেছে গ্রামের সাদামাটা পরিবেশে। তাঁর পিতা জিতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী কলকাতায় একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে কাজ করতেন, এছাড়াও তিনি ছিলেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের বিশিষ্ট অনুরাগী এবং মাতা ছিলেন প্রফুল্ল নন্দিনী দেবী। নীরেন্দ্রনাথের দুই বছর বয়সে তাঁর মা বাবার কর্মস্থল কলকাতায় চলে যান এবং তিনি গ্রামে তার ঠাকুরদা লোকনাথ চক্রবর্তীর কাছেই থেকে যান।

শিক্ষাজীবন :–

নীরেন্দ্রনাথের প্রাথমিক লেখাপড়া ফরিদপুরের পাঠশালায়। পরে ঠাকুরদার মৃত্যুর পর গ্রাম ছেড়ে ১৯৩০ সালে কলকাতায় চলে এসেছিলেন। কলকাতায় এসে প্রথমে কলকাতার বঙ্গবাসী স্কুলে এবং পরে মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে “প্রবেশিকা পরীক্ষা“য় উত্তীর্ণ হন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গবাসী কলেজ থেকে আই. এ. পাশ করেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে সেন্ট পলস্ কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে বি. এ. পাশ করেন। ছাত্রাবস্থায় “শ্রীহর্ষ” পত্রিকার সম্পাদনা করে সংবাদপত্রের প্রতি তাঁর নিবিড় ও গভীর অনুরাগের সূত্রপাত হয়।

কর্মজীবন :–

সাহিত্যের পাশাপাশি সাংবাদিকতাও ছিল তাঁর জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ষোল বছর বয়সেই “শ্রীহর্ষ” পত্রিকায় কবিতা প্রকাশ করে তিনি সাহিত্য জগতে পা রাখেন। এরপর “দৈনিক প্রত্যহ” পত্রিকায় তিনি সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি “সত্যযুগ“, “মাতৃভূমি“, “স্বরাজ“, “ভারত“, “ইউনাইটেড প্রেস অফ ইন্ডিয়া” সহ আরও অনেক পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৫১ সাল থেকে তিনি “আনন্দবাজার পত্রিকা“য় যুক্ত হন এবং দীর্ঘদিন “আনন্দমেলা” পত্রিকার সম্পাদনা করেন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ “নীল নির্জন” ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত হয়। এরপর “অন্ধকার বারান্দা“, “নীরক্ত করবী“, “নক্ষত্র জয়ের জন্য“, “আজ সকালে” সহ আরও অনেক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেছেন।

লেখালিখি :–

কবির চার বছর বয়সে তাঁর কথা বলার ভাব দেখে তাঁর কাকিমা বলেছিলেন,- ‌’তুই তো দেখছি কবিদের মতোন কথা বলছিস!’ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী মাত্র পাঁচ বছর বয়সে কবিতা লেখা শুরু করলেও, সেগুলি প্রকাশিত হয়নি। তবে, ষোল বছর বয়স থেকে তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় কবিতা লিখতে শুরু করেন। তার লেখা উল্লেখযোগ্য একটি কাব্যগ্রন্থ “উলঙ্গ রাজা”-এর গুরুত্বপূর্ণ চরণ হল-
"যাও, তাকে যেমন করেই হোক
খুঁজে আনো।
সে এসে একবার এই উলঙ্গ রাজার সামনে
নির্ভয়ে দাঁড়াক।
সে এসে একবার এই হাততালির ঊর্ধ্বে গলা তুলে
জিজ্ঞাসা করুক :
রাজা, তোর কাপড় কোথায়?"

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখালিখির মূল বিষয়বস্তু ছিল সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি, শোষণ, অবিচার। তাঁর কবিতায় ছিল তীব্র প্রতিবাদী সুর।তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘নীল নির্জন‘ প্রকাশ পায় ১৯৫৪ সালে। সেই শুরু, একে একে প্রকাশ পেতে থাকে ‘অন্ধকার বারান্দা‘, ‘সময় বড় কম’, ‘ঘুমিয়ে পড়ার আগে‘, ‘আজ সকালে‘। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী কবিতা ছাড়াও একাধিক গল্প ও উপন্যাস লিখেছেন। যেমন– “শ্যামনিবাস রহস্য” (১৯৯০), “চশমার আড়ালে” (১৯৯৩), “রাত তখন তিনটে” (১৯৯৪), “আংটি রহস্য” (২০০০), “শান্তিলতার অশান্তি” (২০০২),“কামিনীর কণ্ঠহার” (২০০৩) প্রভৃতি। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যে তার সৃষ্ট গোয়েন্দা চরিত্রের নাম ভাদুড়ী মশাই।

পুরস্কার :–

কবি নীরেন্দ্রনাথ তাঁর ‘উলঙ্গ রাজা’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯৭৪ সালে ‘সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার‘ পান। ১৯৫৮ সালে ‘উল্টোরথ পুরস্কার‘, ১৯৭০ সালে ‘তারাশঙ্কর স্মৃতি‘ ও ১৯৭৬ সালে ‘আনন্দ শিরোমণি’ পুরস্কার পান কবি। ২০০৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডি. লিট প্রদান করে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করেছিল। তাছাড়াও তিনি অনেক পুরস্কার লাভ করেছেন।

জীবনাবসান :–
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, বাংলা সাহিত্যের একজন প্রতিভাবান কবি, ২০১৮ সালের ২৫শে ডিসেম্বর কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। ৯৪ বছর বয়সে এই বিশিষ্ট কবির মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্য জগতের এক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে।

তাঁর বন্ধু রমাপদ চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল নীরেন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, 'আমারও আর দেরি নেই। রমাপদকে বেশি দিন একা থাকতে হবে না। ও খুব শিগগিরই কথা বলার লোক পেয়ে যাবে।'

উপসংহার :–
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের অন্যতম প্রভাবশালী কবি। তাঁর কবিতাগুলি ছিল সমাজের বাস্তবতার প্রতিফলন। তাঁর কবিতা আজও আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। তাঁর কবিতা আমাদেরকে সমাজের বাস্তবতাকে দেখার একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়। তাঁর মৃত্যু হলেও তাঁর কবিতা চিরকাল বাঁচবে। তাঁর জীবন এবং সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা।



রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ


ভূমিকা :–

“প্রেম ধীরে ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়, হয় নাকি?”

বাংলা সাহিত্যের আকাশে এক উজ্জ্বল তারা হিসেবে জ্বলজ্বলে আলো জীবনানন্দ দাশ ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক৷ তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃৎদের মধ্যে অন্যতম৷ তার কবিতায় পরাবাস্তবের দেখা মেলে৷ তাঁর জীবন এবং সাহিত্যের মধ্যে এক অদ্ভুত সম্পর্ক ছিল, যা তাঁর কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে।


জন্ম ও বংশ পরিচয় :–

১৮৯৯ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন জীবনানন্দ দাশ (তার একটি ডাক নাম ছিল মিলু)। তাঁর পিতা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন একজন শিক্ষক এবং ‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকার সম্পাদক। তাঁর মাতা কুসুমকুমারী দেবী -ও ছিলেন মহিলা কবি (কুসুমকুমারী দেবী রচিত একটি বিখ্যাত কবি “আদর্শ ছেলে”, যার প্রথম চরণ “আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে“)। জীবনানন্দের পূর্বপুরুষগণ ঢাকার বিক্রমপুর অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর পরিবারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ছিল। এই পরিবেশই জীবনানন্দকে সাহিত্যের দিকে আকৃষ্ট করে।

শিক্ষাজীবন :–

জীবনানন্দ দাশ ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে জীবনানন্দ বরিশালের ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে একেবারে পঞ্চম শ্রেণীে ভর্তি হন। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে আইএ পাস করেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯১৯ খ্রী. ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ পাস করে জীবনানন্দ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি হন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে এখান থেকেই ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স নিয়ে তিনি স্নাতক ডিগ্রি (এমএ) অর্জন করেন। শিক্ষাজীবন থেকেই তাঁর মধ্যে সাহিত্যচর্চার প্রতি গভীর আগ্রহ দেখা যায়।

কর্মজীবন :–

স্নাতকোত্তরের পরের বছরই ১৯২২ খ্রী. কলকাতার সিটি কলেজে অধ্যাপনার কাজে নিযুক্ত হন। কিন্তু এই চাকরি তার দীর্ঘস্থায়ী হননি। এরপর খুলনায় বাগেরহাট কলেজে এবং পরে দিল্লির রামমজ কলেজে অধ্যাপনা করেন তিনি। তারপর তিনি কিছুদিন কর্মহীন হয়ে থাকেন এবং পড়ে বরিশালে সহজমোহন কলেজে অধ্যাপনার কাজে যোগদান করেন। এরপর কয়েক দশকের মধ্যে তিনি সপরিবার নিয়ে কলকাতা আসার উদ্যোগ নেয়। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি খড়্গপুর কলেজে অধ্যাপনার কাজে যোগদেন। এবং পড়ে বরিষা কলেজে এবং সেখান থেকে হাওড়ার গার্লস কলেজে অধ্যাপনার কাজে দীর্ঘস্থায়ীভাবে যোগ দেন।

সাহিত্য কর্ম:–

ছাত্রজীবন থেকেই জীবনানন্দ দাশ লেখালিখি শুরু করেন। তাঁর প্রথম কবিতা ‘বর্ষ আবাহন’ সত্যানন্দ সম্পাদিত ‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯২৪-২৫ সাল থেকে তিনি নিয়মিত লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরা পালক’ ১৯২৭ সালে প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ (১৯৩৬), ‘বনলতা সেন’ (১৯৪২), ‘মহাপৃথিবী’ (১৯৪৪), ‘সাতটি তারার তিমির’ (১৯৪৮), ‘রূপসী বাংলা’ (১৯৫৭) ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন।

জীবনানন্দ দাশ কবিতার পাশাপাশি বহু গল্প-উপন্যাস রচনা করেনা, কিন্তু সেগুলি লোকচক্ষুর আড়ালেই রয়ে গেছে। এখন সেগুলি প্রকাশিত হওয়ার ফলে তাঁর সম্পর্কে নতুন চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। তাঁর উপন্যাসগুলি হল– “জলপাইহাটি”, “সুতীর্থ”, “কারুবাসনা” ইত্যাদি। তাঁর লেখা অনেক ছোটগল্প আছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গল্পটি হল ‘কবিতার কথা’।

তিনি বাংলার কথা উল্লেখ করে বলেছেন– “বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।”


সাহিত্যে অবদান :–
জীবনানন্দ দাশের কবিতা শুধু একটি কবিতা নয়, এটি জীবনের অর্থ খোঁজার এক অবিরাম যাত্রা। তাঁর কবিতায় প্রকৃতি, মানুষ, সময়, মৃত্যু ব্যক্তিবাদ, অস্তিত্ববাদ, মৃত্যু – সবকিছুই এক অদ্ভুত সমন্বয়ে মিশে আছে। তাঁর কবিতায় প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের এক অনন্য বর্ণনা পাওয়া যায়। কলকাতার জীবন, নগরের কোলাহল, মানুষের সংগ্রাম – সবকিছুই তাঁর কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে।
প্রকৃতি: তিনি প্রকৃতিকে এক জীবন্ত সত্তা হিসেবে দেখতেন। তাঁর কবিতায় প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের এক অনন্য বর্ণনা পাওয়া যায়। “ঝরা পালক” কাব্যগ্রন্থে তিনি প্রকৃতির বিভিন্ন রূপের বর্ণনা করেছেন।
একাকিত্ব: তাঁর কবিতায় একাকিত্বের গভীর অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। “বনলতা সেন” কবিতায় তিনি একাকিত্বের বেদনা বর্ণনা করেছেন।
সময়: তিনি সময়কে এক অবিরাম প্রবাহ হিসেবে দেখতেন। “পৃথিবী ও সময়” কবিতায় তিনি সময়ের গতি এবং মানুষের জীবনের সঙ্গে সময়ের সম্পর্কের বর্ণনা করেছেন।
অস্তিত্ববাদ: তাঁর কবিতায় অস্তিত্ববাদের প্রশ্নগুলি উঠে এসেছে। তিনি মানুষের অস্তিত্বের অর্থ এবং জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করেছেন।

অন্তিম পরিনয়:–
কবি জীবনানন্দ দাশের মৃত্যু হয় ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর। তিনি কলকাতার একটি ট্রাম দুর্ঘটনায় মারা যান। কবি যখন রাস্তা পার হচ্ছিলেন, তখন একটি ট্রাম তাকে ধাক্কা দেয়। এই দুর্ঘটনায় তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশ ভেঙে যায় এবং তিনি গুরুতর আহত হন। আট দিনের অসুস্থতার পর তিনি মারা যান।

পুরস্কার :–
১৯৫২ সালে তাঁর কাব্যগ্রন্থ “বনলতা সেন” নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনের পুরস্কার পায়। এবং ১৯৫৫ সালে তাঁর মৃত্যুর পর, ❝জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা❞ (১৯৫৪) গ্রন্থটি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করে। এই পুরস্কারটি ভারত সরকারের সর্বোচ্চ সাহিত্যিক সম্মান।

জীবনানন্দ দাশের প্রভাব :–
জীবনানন্দ দাশের কবিতা বাংলা সাহিত্যে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল। তাঁর কবিতা অনেক নতুন প্রজন্মের কবিদের অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি বাংলা কবিতাকে আধুনিকতার দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর কবিতা আজও তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয়।

উপসংহার :–
জীবনানন্দ দাশ ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক মহান কবি, এছাড়াও তিনি ছিলেন একজন দার্শনিক, একজন চিন্তক। তাঁর কবিতা জীবনের গভীর অনুভূতি, অস্তিত্বের সংকট, প্রেম ও বিরহের এক গভীরতম সত্যকে উন্মোচন করে। মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে যখন তার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল, ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কবিতে পরিণত হয়েছেন। আজও তাঁর কবিতা আমাদেরকে জীবন সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।

প্রবন্ধ রচনা কখনো কোন জায়গা থেকে মুখস্ত করে হুবহু লিখবে না। কারণ, একটি জায়গা থেকে শুধুমাত্র তুমি একাই নও, অনেক ছাত্রছাত্রী লিখছে। এক্ষেত্রে তোমাদের সবারই রচনা যদি একই হয়ে যায় সেক্ষেত্রে তুমি কিভাবে বেশি নম্বর পাবে? সুতরাং, তোমরা একটি রচনাকে উদাহরণ হিসেবে খুব ভালো করে দেখে নিয়ে নিজেই বাড়িতে দু-একবার লেখার চেষ্টা করবে, তাও আবার নিজের ভাষাতে।
এক্ষেত্রে কি হবে, তোমার নম্বর বেশি পাওয়ার সুযোগ থাকে। অবশ্যই রচনা লেখার সময় দু-একটা ছড়া, ডাবল কোটেশন (” “) এসবের ব্যবহার করবে এবং মেইন মেইন পয়েন্টকে হাইলাইট করার চেষ্টা করবে। যাতে, যে স্যার তোমার খাতা দেখবেন তিনি সন্তুষ্টি বোধ করেন।
 

Latest resources

AdBlock Detected

We get it, advertisements are annoying!

Sure, ad-blocking software does a great job at blocking ads, but it also blocks useful features of our website. For the best site experience please disable your AdBlocker.

I've Disabled AdBlock